■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের জি-১১ এলাকার জেলা ও দায়রা আদালত ভবনের বাইরে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এই হামলায় ২৭ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার পাকিস্তানের স্থানীয় সময় স্থানীয় সময় বেলা ১২টা ৩৯ মিনিটের দিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি।
হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে দেশটির জঙ্গিগোষ্ঠী পাকিস্তান তালেবান। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা আদালত চত্বরে হামলার দায় স্বীকার করেছে গোষ্ঠীটি।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এ ঘটনাকে ‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণ’ বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই হামলাকে দেশের জন্য একটি ‘জেগে ওঠার বার্তা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধের অবস্থায় আছি। যারা মনে করেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চল ও বেলুচিস্তানের দূরবর্তী এলাকায় কেবল এই যুদ্ধ লড়ছে, তাদের জন্য ইসলামাবাদের জেলা আদালতে আজকের এই আত্মঘাতী হামলাটি হলো জাগ্রত হওয়ার বার্তা।’
খাজা আসিফ আরও যোগ করেন, এই পরিস্থিতিতে কাবুলের শাসকদের সঙ্গে সফল আলোচনার জন্য বেশি আশা রাখা অর্থহীন হবে।
ভিডিওতে নিরাপত্তাবেষ্টনীর পেছনে একটি দগ্ধ গাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উঠতে দেখা যায়।
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী রুস্তম মালিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি যখন আমার গাড়ি পার্ক করে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করছিলাম…ঠিক তখনই গেটে একটি বিকট শব্দ শুনতে পেলাম।’ বিস্ফোরণের পর সেখানে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
মালিক বলেন, ‘আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ প্রাঙ্গণের ভেতরে ছুটছিলেন। আমি গেটের ওপর দুটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি এবং বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরে গিয়েছিল।’ বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশে থাকা গাড়িগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসলামাবাদে হামলায় ভারতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ শেহবাজ শরিফের
ইসলামাবাদের আদালতের বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। মঙ্গলবার ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা আদালত চত্বরে বোমা হামলার ঘটনার পরপরই এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ করেছেন তিনি।
বিবৃতিতে ইসলামাবাদের আদালতের বাইরে আত্মঘাতী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন শেহবাজ শরিফ। পাশাপাশি অভিযোগ করে বলেছেন, এই হামলায় ভারতের সক্রিয়ভাবে সমর্থিত চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলো জড়িত।
বিবৃতিতে শেহবাজ শরিফ বলেন, ভারতের সন্ত্রাসী বিভিন্ন প্রক্সি গোষ্ঠীর মাধ্যমে পাকিস্তানের নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, স্থানীয় সময় বেলা ১২টা ৩৯ মিনিটের দিকে কাছেরিতে (জেলা আদালত) আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে এতে ১২ জন নিহত ও ২৭ জন আহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারতকে এই অঞ্চলে প্রক্সির গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে সন্ত্রাস ছড়ানোর মতো জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
যদিও দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই বিস্ফোরণের জন্য আফগানিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, কাবুলের শাসকরা পাকিস্তানে সন্ত্রাস বন্ধ করতে পারে, কিন্তু ইসলামাবাদে এই যুদ্ধ নিয়ে আসা কাবুলের একটি বার্তা; যার জবাব পাকিস্তান পুরোপুরি দিতে সক্ষম।
বিস্ফোরণের এই ঘটনাকে দেশের জন্য ‘‘এক সতর্কবার্তা’’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। খাজা আসিফ বলেছেন, আমরা যুদ্ধাবস্থায় রয়েছি। কেউ যদি মনে করেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী কেবল আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকা কিংবা বেলুচিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যুদ্ধ করছে, তাহলে আজ ইসলামাবাদের জেলা আদালতে আত্মঘাতী হামলাটি তাদের জন্য সতর্কবার্তা।
তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের করা অভিযোগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি ভারত।
