প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন আলী রীয়াজ

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজকে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস অধ্যাপক আলী রীয়াজকে তার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগদান করেছেন।

বিশেষ সহকারী পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন আলী রীয়াজ উপদেষ্টার পদমর্যাদা, বেতন-ভাতাদি ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন বলেও জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক (ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর) রীয়াজ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান পদে দায়িত্ব পান। এরপর গত ফেব্রুয়ারিত তাকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি করা হয়। এই কমিশনের সভাপতি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। গত ৩১ অক্টোবর ওই কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়।

জুলাই সনদ প্রণয়নসহ বিভিন্ন সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সংলাপে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অগ্রভাগে ছিলেন আলী রীয়াজ।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এছাড়া ছয়টি পৃথক সংস্কার কমিশনের প্রধানরা কমিশনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ পর্যালোচনা, প্রয়োজনীয় সংশোধন প্রস্তাব এবং অন্তর্বর্তী সরকারের তত্ত্বাবধানে তা বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরির কাজ করে এই কমিশন। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর। এ ব্যাপারে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সনদ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুদক এবং পুলিশ সংস্কারে ছয়টি পৃথক কমিশন করে সরকার। গত জানুয়ারিতে কমিশনগুলো প্রতিবেদন জমা দেয়। এইসব কমিশনের কয়েকটি প্রধান এবং কয়েকটির সদস্যদের নিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি গঠন করা ছয় মাস মেয়াদী ঐকমত্য কমিশন। ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সংলাপের মাধ্যমে কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়।
 
ঐকমত্য কমিশন ছয় সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশ নিয়ে গত মার্চে প্রথম দফার সংলাপ শুরু করে। ২২ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৪টি বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ৬২ সংস্কারে ঐকমত্য ঘোষণা করে সরকার। ৩ জুন দ্বিতীয় দফার সংলাপের শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা। ৩১ জুলাই পর্যন্ত সংলাপে ২২ মৌলিক সংস্কারে সংখ্যাগরিষ্ঠে ঐকমত্য ঘোষণা করে কমিশন। মোট ৮৪ সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে প্রণয়ন করা হয় জুলাই সনদ।
 
আগস্টে কমিশনের মেয়াদ এক মাস বৃদ্ধি করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর দলগুলোর সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে সংলাপ হয়। এর আগে কমিশনের মেয়াদ ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ওই মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যহত রাখে কমিশন। ১৭ অক্টোরব সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সনদে স্বাক্ষরে করে বিএনপি, জামায়াতসহ ২৪টি দল। পরেদিন স্বাক্ষর করে আরেকটি দল। এর আগে কমিশনের মেয়াদ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপি-জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। 

ওই দিন অনুষ্ঠানের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের অনেক স্রোত, কিন্তু মোহনা একটি। সেটি হলো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। সেই স্বপ্ন, প্রত্যাশার স্মারক যতটুকু অর্জিত হয়েছে- জুলাই জাতীয় সনদ সেটির প্রথম পদক্ষেপ।’

অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, এই অগ্রসরমানতায় বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের ভূমিকা আছে। প্রত্যাশা থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো মত ও পথের পার্থক্য থাকা স্বত্ত্বেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *