পরকীয়ার জেরে হত্যা করে ২৬ টুকরা, গ্রেফতার ২

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে হত্যা এবং লাশ ২৬ টুকরা করে দুটি ড্রামে ফেলে রাখার মামলায় প্রধান আসামি জরেজুল ইসলাম ও তার প্রেমিকা শামীমাকে আলামতসহ গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩।

জরেজকে গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মুখপাত্র তালেবুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে নীল রঙের দুটি ড্রামে আশরাফুলের খণ্ড খণ্ড মরদেহ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক পরিচয় শনাক্ত না হলেও পরে আঙুলের ছাপ নিয়ে আশরাফুলের পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ।

আশরাফুল হক (৪২) রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার ১০ বছরের এক মেয়ে ও সাত বছরের এক ছেলে রয়েছে। তার বাবার নাম মো. আবদুর রশীদ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি বলছে, আশরাফুলকে হত্যার পর লাশের সঙ্গে একই বাসায় অন্তত ‘২৪ ঘণ্টার বেশি’ লাশ কী করবেন তা নিয়ে পরিকল্পনা করেন জারেজুল ইসলাম ও শামীমা। একপর্যায়ে দুজনে সিদ্ধান্ত নেন, লাশ টুকরো করে ড্রামের মধ্যে নিয়ে কোথাও ফেলে দিয়ে আসবেন। এমনভাবে কাজটি করবেন যেন কেউ বুঝতে না পারে। সে অনুযায়ী দা দিয়ে লাশ ২৬ টুকরো করে ড্রামে ভরে হাইকোর্টের সামনে ফেলে যায়।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, জরেজ শামীমার মাধ্যমে আশরাফুলকে ডেকে নিয়ে আটকে রাখে এবং জোর করে আপত্তিকর অবস্থার ছবি তোলে। এভাবে সে চাপ দিয়ে আর্থিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আশরাফুলকে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়। আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

আসামি জারেজুল ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটি জানিয়েছেন বলে ডিবির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‌‘পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জারেজুলকে ডিবি কার্যালয় আনা হয়েছে।’

জানা যায়, নিহত ব্যবসায়ী আশরাফুল এবং মালায়েশিয়া প্রবাসী জারেজুল বাল্যবন্ধু। তাদের বাড়ি একই এলাকায়, রংপুরে। বছর তিনেক আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লার এক প্রবাসীর স্ত্রী শামীমার সঙ্গে জারেজুলের পরিচয় হয়। শামীমা দুই সন্তান নিয়ে কুমিল্লায় বাস করেন। এক পর্যায়ে জারেজুল ও শামীমা বিবাহিবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান। জারেজুল মাঝে মধ্যেই মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসতেন এবং শামীমার সঙ্গে দেখা করতেন। এই সম্পর্কের কথা জারেজুল তার বন্ধু আশরাফুলকে জানিয়েছিলেন। একসময় জারেজুলের কাছ থেকে আশরাফুল শামীমার ফোন নম্বর নেন। তিনিও শামীমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এক পর্যায়ে দুজনের সম্পর্ক হয়।

ডিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, গত ২৩ অক্টোবর জারেজুল মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন। এরপর রাজধানীর দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। ওই বাসায় শামীমাকে নিয়ে ওঠেন। জারেজুলের সঙ্গে ওই বাসায় আসেন আশরাফুল। তখন জারেজুল জানতে পারেন, শামীমার সঙ্গে আশরাফুল সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। এ ঘটনার জেরে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকালের মধ্যে ওই বাসায় আশরাফুলকে হত্যা করা হয়। লাশ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ছিলেন জারেজুল ও শামীমা। এ সময় বাইরে থেকে জারেজুল খাবার কিনে নিয়ে আসতেন, তারপর তিনি ও শামীমা খেতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে লাশ বাথরুমে নিয়ে ২৬ টুকরো করেন জারেজুল ও শামীমা। এরপর লাশের টুকরো দুটি ড্রামের ভেতর রাখা হয়। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওই ড্রাম নিয়ে তারা রাজধানীতে ঘুরতে থাকেন। এক পর্যায়ে হাইকোর্টের সামনে সেটি ফেলে যান

শুক্রবার সকালে পরিবারের সদস্যরা আশরাফুলের মরদেহ নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে যান। সেখানে বোন আনজিরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আনজিরা বিলাপ করে বলেন, আশরাফুল কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। তিনি ট্রাকে কাঁচামাল নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতেন। গত মঙ্গলবার আশরাফুল তার বাবাকে হাসপাতালে রেখে মালয়েশিয়াফেরত বন্ধু জরেজ মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় রওনা হয়েছিলেন।

ওই দিনই আশরাফুলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল তা বোনের। তখন আশরাফুল বলেছিলেন যে তিনি নারায়ণগঞ্জে আছেন। তার সঙ্গে জরেজও রয়েছেন। তারা এক পাওনাদারের কাছে টাকা নিতে অপেক্ষা করছেন।

আনজিরা বলেন, ‘আশরাফুল বলেছিল, “বাবাকে হাসপাতালে রিলিজ দিবে, টাকাপয়সা দিছি। বাবাক নিয়া আইসো।’ এরপর থাকি আশরাফুলকে কল দিলে তার বন্ধু জরেজ ধরে। আর বলে, ‘আশরাফুল ব্যস্ত আছে, কালেকশনে গেছে।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *