এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে পড়ল গাড়ি, পথচারী নিহত

■ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ■ 

চট্টগ্রামের নিমতলা এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে গাড়ি নিচের সড়কে থাকা একটি মোটরসাইকেলের ওপর পড়েছে। এ সময় মোহাম্মদ শফিক (৫৫) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচজন।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে ৫টার দিকে নগরীর নিমতলা বিশ্বরোড এলাকায় চট্টগ্রাম এলিভেডেড এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

ফয়সাল নামে প্রত্যক্ষদর্শী এক কিশোর বলেন, গাড়িটি নিচে পড়ার পর বিকট শব্দ হয়। কাছে আসার পর দেখা যায় গাড়িটি একদিকে উল্টে পড়ে আছে এবং চাকা ঘুরছে। সেখান থেকে ১৭-১৮ বছর বয়সী এক মেয়ে বের হয়ে আসে।

“আমরা মিলে সেখান থেকে তিনজনকে বের করি। তাদের মধ্যে দুইজনের বয়স ১৮-২০ বছর এবং চালকের বয়স আরেকটু বেশি হতে পারে।”

নিচের সড়কের পাশে মাটির স্তূপ ছিল এবং গাড়িটিতে এয়ার ব্যাগ থাকায় হতাহাতের সংখ্যা কম হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা।

বন্দর থানার উপপরিদর্শক (সেকেন্ড অফিসার) আবু সাঈদ রানা বলেন, পতেঙ্গা থেকে শহরের দিকে যাওয়ার পথে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে একটি প্রাইভেটকার ছিটকে সড়কে পড়ে গিয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় পথচারী শফিক গুরুতর আহত হলে মা ও শিশু হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। তিনি বন্দরের কর্মী বলে জানা গেছে। এ সময় দুর্ঘটনায় পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গাড়িতে চারজন যাত্রী ছিলেন।

আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের লালখানবাজারমুখী লেইনের নিমতলা মোড়ের কাছেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। কীভাবে গাড়িটি পড়ে গেল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির উভয় পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

সহকারী পুলিশ কমিশনার (বন্দর) মাহমুদুল হাসান বলেন, যে স্থানে গাড়িটি নিচে পড়ে যায়, সেই অংশে একটি বাঁক রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটি অতিরিক্ত গতিতে চলার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং রেলিং টপকে পড়ে যায়।

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পরীক্ষামূলক চালুর পর গত বছরের আগস্টে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহীর মৃত্যু হয়। চলতি নভেম্বরেই আরও দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটে এই উড়ালসড়কে। চালকদের বেপরোয়া গতি, বাঁকের নকশা এবং মোটরসাইকেল নিষেধাজ্ঞা অমান্য করাকেই দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বলছে, এক্সপ্রেসওয়ের বাঁকগুলো সম্পূর্ণ ‘স্বাভাবিক’ নকশার। দুর্ঘটনার জন্য তারা চালকদেরই দায়ী করছেন।

যানবাহন চালকেরা জানিয়েছেন, এক্সপ্রেসওয়েতে কোথাও গতিসীমা পর্যবেক্ষণের ক্যামেরা বা মেশিন নেই। ফলে গতিনিয়ন্ত্রণ বলতে কার্যত কিছুই নেই। কিছু স্থানে গতিরোধক থাকলেও সেগুলোও অধিক গতি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

সিডিএ সূত্র বলছে, এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার এবং বাঁকযুক্ত অংশে ৪০ কিলোমিটার। গাড়ি দাঁড় করানো বা থামানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে প্রায়ই দেখা যায়, চালকেরা গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলেন বা যাত্রী ওঠান–নামান—যার ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড ও কাঠগড় এলাকায় বেশ কয়েকটি বাঁক রয়েছে। এসব বাঁকে গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা খুব কম চালকদের মাঝে। ফলে নিয়মিতই ছোট–বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *