আশুলিয়ার বাইপাইলে ৩.৩ মাত্রার ভূমিকম্প

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় সকালে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডে ভূকম্পন অনুভূত হয়।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, এটি একটি ক্ষুদ্র মাত্রার স্থানীয় ভূমিকম্প, যার উৎপত্তিস্থল ছিল বাইপাইল এলাকা।

এর আগে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দেশের বিভিন্ন এলাকায় একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭, যার উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস ভূমিকম্পটির তীব্রতা ৫ দশমিক ৫ বলে জানিয়েছে। যা ঢাকার আগারগাঁওয়ের সিসমিক সেন্টার থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।

এ ভূমিকম্পে ঝাঁকুনিকে এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। আগামীতে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৩ জেলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নরসিংদীতে পাঁচ জন, ঢাকায় চার জন এবং নারায়ণগঞ্জে দুই জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সারা দেশে চার শতাধিকের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন এবং অনেক ভবন ও স্থাপনায় ফাটল দেখা দিয়েছে।

ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে যেসব জেলা

ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় সমগ্র বাংলাদেশকে মোট তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চঝুঁকির আওতাভুক্ত অঞ্চলকে জোন-১, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা জোন-২ এবং জোন-৩-এর এলাকা নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক মানচিত্রে দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়।

প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা জোন-১-এর আওতায় সর্বোচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত। সাধারণত ফল্ট লাইন বা প্লেট বাউন্ডারির আশপাশের এলাকা ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৯টি জেলা, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদীর কিছু অংশ, পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বেশ কিছু এলাকা উচ্চঝুঁকিপ্রবণ। তবে জোন-৩-এর এলাকা হিসাবে খুলনা, যশোর, বরিশাল এবং পটুয়াখালী এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সর্বনিম্ন।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে অন্তত ৫ দফা বেশ জোরালো ভূকম্পন অনূভূত হয়। এর প্রায় সবগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার এলাকা। ফলে ভবিষ্যতে এসব এলাকায় আরও বড় ধরনের কম্পনের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও মেঘালয়ের সীমান্তসংলগ্ন সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলকে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের চারপাশে ভূমিকম্পের পাঁচটি উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করা আছে। এর একটিকে বলা হয় প্লেট বাউন্ডারি-১, যেটা মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত। এছাড়া প্লেট বাউন্ডারি-২ নোয়াখালী থেকে সিলেট এবং প্লেট বাউন্ডারি-৩ সিলেট থেকে ভারতের দিকে চলে গেছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট রয়েছে। এগুলোই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *