■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা। রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরত চেয়ে ভারতের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার দিল্লির বাংলাদেশ মিশন থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
গত ১৭ নভেম্বর রায়ের দিন সচিবালয়ে প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে ভারতকে ফের চিঠি দেওয়া হবে।
একই পরিকল্পনার কথা তিনি শোনান রায়ের তিন পরও। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ নজরুল বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল— ওনাদের প্রত্যর্পণের জন্য আমরা চিঠি দিচ্ছি।
পাশাপাশি ওনাদের প্রত্যর্পণ করার জন্য, যেহেতু ওনারা এখন দোষী সাব্যস্ত, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত, কাজেই আমরা মনে করি ভারতের এখন বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে তাদের ফেরত দেওয়ার।
আইন উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পরের দিনই চিঠি পাঠানো হয় বলে জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছর ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন হাসিনা। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৭ নভেম্বর হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির বরাতে গত ১৭ নভেম্বর বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আজকের রায়ে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল জুলাই হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আমরা ভারত সরকারের প্রতি অনতিবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের আহ্বান জানাই। দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে এটি ভারতের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্বও বটে।
বিবিসি জানিয়েছে, এর আগেও কয়েক দফায় শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য চিঠিও পাঠানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশের এসব অনুরোধের কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ভারত।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কয়েকবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ তাকে ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক উত্তর মেলেনি।
শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতকে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো চিঠি দিল বাংলাদেশ। গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে গত বছরের ২০ ও ২৭ ডিসেম্বর দেওয়া চিঠির প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছরের চিঠিতে ভারতে পলাতক শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী হস্তান্তরের অনুরোধ জানানো হয়।
এবারের চিঠিতে বলা হয়, বিস্তারিত বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন। আদালত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতকে পুনরায় অনুরোধ জানাচ্ছে।
