বলিউডের বর্ষিয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র মারা গেছেন

■ বিনোদন প্রতিবেদক ■ 

বলিউডের বর্ষিয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র সিং দেওল মারা গেছেন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যার সাথে লড়াই করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।

বলিউডের হি-ম্যান খ্যাত অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। আগামী ৮ ডিসেম্বর ৯০ বছরে পা দিতেন তিনি।

তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ভারতের সিনেমার ছয় দশকের একটি সোনালি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হলো।

ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনে। মুম্বাইয়ের পবন হংসে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছে। ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, অক্ষয় কুমার, অনিল কাপুর, সঞ্জয় দত্ত, আমির খান, সালমান খানসহ আরও অনেক বলিউড তারকা তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে পবন হংসে গিয়েছেন। হেমা মালিনী, এষা দেওলসহ দেওল পরিবারের সবাই এখন সেখানে উপস্থিত আছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং মোদি থেকে বলিউড তারকা করণ জোহর, কারিনা কাপুর খান, বোমান ইরানি, অনন্যা পান্ডেসহ আরও অনেকে শোক প্রকাশ করেছেন।

ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন বলিউড পরিচালক করণ জোহর। লিখেছেন, ‘একটি যুগের অবসান। একজন তাবড় মেগাস্টার। মূলধারার সিনেমায় একজন নায়কের মূর্ত প্রতীক। অসাধরণ সুদর্শন, এবং পর্দায় তার কালজয়ী উপস্থিতি। তিনি ভারতীয় সিনেমার একজন প্রকৃত কিংবদন্তি ছিলেন এবং থাকবেন।’

সম্প্রতি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। তখন তার মৃত্যুর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। অবশেষে সব গুঞ্জন থামিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন ধর্মেন্দ্র।

বলিউডের সোনালি যুগে যখন প্রেম মানেই কবিতা, নায়ক মানেই আকর্ষণ ও আভিজাত্যের প্রতীক তখনই আবির্ভাব হয় এক এমন অভিনেতার। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে কোমল হৃদয়ের প্রেমিক, নির্ভীক যোদ্ধা এবং পরিপূর্ণ ভদ্রলোক। তিনিই ধর্মেন্দ্র। ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে ‘হ্যান্ডসাম হিরো’ উপাধি অর্জন করেন নিজের অভিনয়, ব্যক্তিত্ব ও মানবিকতায়।

১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় ধর্মেন্দ্র সিং দেওল এর জন্ম। ছোটবেলায় সিনেমার প্রতি গভীর টানই তাকে মুম্বাইয়ে নিয়ে আসে। ১৯৬০ সালে ‘দিল বিহ তেরা হাম বিহ তেরে’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তবে তার আসল সাফল্যের শুরু হয় ষাটের দশকের মাঝামাঝি, যখন তিনি একের পর এক হিট ছবির মাধ্যমে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন।

‘ফুল অউর পাথর’ (১৯৬৬) ধর্মেন্দ্রকে একঝটকায় বলিউডের ‘হি-ম্যান’ বানায়। পরের দুই দশকজুড়ে তিনি হয়ে ওঠেন হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। ‘শোলে’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘ধর্মবীর’, ‘দোস্ত’, ‘আনপড়’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’—প্রতিটি ছবিতেই তিনি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন।

ব্যক্তি জীবনে ধর্মেন্দ্র দুটি বিয়ে করেছেন। একজন নন্দিত অভিনেত্রী হেমা মালিনি। সেই সংসারে তার একমাত্র কন্যা এষা দেওল। ধর্মেন্দ্রর প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌর। সেই সংসারে আছে দুই পুত্র সানি দেওল ও ববি দেওল এবং দুই মেয়ে বিজেতা দেওল ও অজিতা দেওল।

সর্বশেষ করণ জোহর পরিচালিত ‘রকি ওউর রানি কি প্রেম কাহানি’ সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকদের মনে নতুন করে জায়গা করে নেন ধর্মেন্দ্র। সিনেমায় শাবানা আজমির সঙ্গে তার রোমান্টিক দৃশ্য বলিউডে আলোড়ন তোলে।

এদিকে তার অভিনীত মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে শ্রীরাম রাঘবনের পরিচালনায় নির্মিত ‘ইক্কিস’ সিনেমাটি।

ধর্মেন্দ্রর জীবনের বড় অধ্যায় তাঁর সহ–অভিনেত্রী ও পরবর্তী সময়ে স্ত্রী হেমা মালিনীকে ঘিরে। ১৯৮০ সালে তাঁদের বিয়ে হয়, যা বলিউডের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি। একসঙ্গে তাঁরা কাজ করেছেন ৩০টির বেশি ছবিতে। ‘সীতা অউর গীতা’, ‘ড্রিমগার্ল’, ‘শরিফ বদমাশ’, ‘জুগনু’, ‘দোস্ত’—সবই আজও দর্শকের কাছে কালজয়ী।

৪৬০ কোটি টাকার সম্পদ রেখে গেছেন ধর্মেন্দ্র

সেই সুবাদে বিপুল সম্পদের মালিক বলিউডের সোনালি দিনের এই অভিনেতা। এনডিটিভির এক প্রতিবেদন অনুসারে, ধর্মেন্দ্রর প্রায় ৩৩৫ কোটি রুপির সম্পদ রয়েছে, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪৬০ কোটি টাকাও বেশি।

ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, ধর্মেন্দ্রর নয়া দিল্লি এবং কারনাল-দিল্লি হাইওয়েতে দুটি রেস্তোরাঁ রয়েছে, আরও রয়েছে লোনাভালায় প্রায় ১০০ কোটি রুপি মূল্যের একটি বিশাল বড় ফার্ম হাউস। মহারাষ্ট্রে প্রায় ১৭ কোটি রুপি মূল্যের কিছু আবাদি ও অনাবাদি জমি রয়েছে এই বর্ষীয়ান অভিনেতার। রয়েছে বেশ কিছু ভিন্টেজ গাড়িও, যার গড় মূল্য প্রায় ২ কোটি রুপি।

এছাড়াও ধর্মেন্দ্রর একটি প্রোডাকশন হাউজও রয়েছে। বিজেতা ফিল্মস নামে এই প্রোডাকশন হাউজ থেকেই নিজেদের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তার দুই ছেলে সানি দেওল ও ববি দেওল। সানির ‘বেতাব’ (১৯৮৩) এবং ববির ‘বারসাত’ (১৯৯৫) ছবি দুটি ছিল সুপারহিট। এমনকি ধর্মেন্দ্রর নাতি করণ দেওলের প্রথম সিনেমাও প্রযোজনা করেছে বিজেতা ফিল্মস।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *