■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দেশ থেকে ভোট দেওয়ার জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে মঙ্গলবার রাত ৮টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ৩২ হাজার ৮১১ প্রবাসী নিবন্ধন করেছেন। নিবন্ধনকারীদের মধ্যে পুরুষ ২৮ হাজার ৫১৬ জন ও নারী ভোটার ৪ হাজার ২৯৫ জন।
নির্দিষ্ট সময়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হলে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীদের ঠিকানায় ব্যালট পেপার পাঠিয়ে দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত ১৯ নভেম্বর থেকে পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের শুরু হওয়া আবেদন চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। আর ২৩ নভেম্বর রাত ১২টা থেকে (২৪ নভেম্বর) শুরু হয়েছে উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিবন্ধন, যা ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
যেসব দেশে নিবন্ধন চলছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে– দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, মিসর, মোজাম্বিক, লিবিয়া, মরিশাস, হংকং, ব্রাজিল, উগান্ডা, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, বতসোয়ানা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, তানজানিয়া, সোমালিয়া, ঘানা, গিনি, মরক্কো, দক্ষিণ সুদান, চিলি, সিয়েরা লিওন, ইকুয়েডর, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গাম্বিয়া, পেরু, জিম্বাবুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্র।
সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৮ হাজার ৫৫৮ জন নিবন্ধন করেছেন। এরপর যথাক্রমে জাপান ৫ হাজার ৭৯২ জন, যুক্তরাষ্ট্র ৪ হাজার ৪৮৭ জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ হাজার ৬৫৬ জন, কানাডা ২ হাজার ৯৫৮ জন, অস্ট্রেলিয়া ২ হাজার ৭৫৯ জন ও চীন থেকে ১ হাজার ৫৫৫ জন নিবন্ধন করেছেন।
সৌদি প্রবাসীরা ৪ থেকে ৮ ডিসেম্বর, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর, মধ্য প্রাচ্যের সৌদি আরব বাদে অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন করতে পারবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে বসবাসরতরা (ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি, সরকারি চাকরিজীবী, কয়েদি ও অন্যান্য দেশে বসবাসরত ভোটাররা) ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন করতে পারবেন।
ইসি জানিয়েছে, অ্যাপে নিবন্ধনকারীদের ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট ডাকযোগে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ভোটার ভোট দিয়ে ফিরতি খামে তা আবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন।
পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের নিবন্ধন পদ্ধতি
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রবাসী ভোটার যে দেশ থেকে ভোট দিতে ইচ্ছুক কেবল সেই দেশের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট প্রাপ্তি এবং ভোট প্রদানের জন্য Google Play Store /App Store হতে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল করতে হবে। ব্যবহারকারী বাংলা/ইংরেজি যেকোনো একটি ভাষা নির্বাচন করে অ্যাপে নিবন্ধনের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নির্দেশাবলি সম্পর্কে জানতে পারবেন। বিদেশে ব্যালট প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে নির্ভুল ঠিকানা দিতে হবে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য ভোটদান ওসিভি (আউট অব কান্ট্রি ভোটিং) প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে, যা দেশের নির্বাচনি ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্ভুক্তি।
এ ছাড়া নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ভোটার, আইনি হেফাজতে থাকা ভোটার, নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবীসহ প্রায় ১০ লাখ ভোটারকে আইসিপিভি (ইন-কান্ট্রি পোস্টাল ভোটিং) ভোট সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি একদিনে গণভোট আয়োজন নির্বাচন কমিশনের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব হলেও প্রস্তুতি সুষ্ঠুভাবে এগোচ্ছে।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে ব্যালট পৌঁছানোর পর, ভোট প্রদান শেষে সেটি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে সর্বনিম্ন ১৫ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন বা ইসি।
এ কারণে বিদেশে যে ব্যালট পাঠানো হবে সেখানে থাকবে নিবন্ধিত সবগুলো রাজনৈতিক দল ও জাতীয় নির্বাচনের জন্য ইসির নির্ধারিত প্রতীক।
একই সাথে ‘না’ ভোট যুক্ত থাকবে ওই ব্যালটে। যদি কোনো আসনে একজন মাত্র প্রার্থী থাকেন, শুধুমাত্র সেই সব আসনের ভোটাররাই এই না ভোট দিতে পারবেন।
প্রবাসীদের কাছে ব্যালট পাঠানো থেকে শুরু ভোট প্রদান শেষে সেগুলো রিটার্নিং অফিসে পাঠানো পর্যন্ত পুরো দায়িত্ব থাকবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের হাতে। নির্বাচন কমিশন বলছে, এক্ষেত্রে ভোটার প্রতি খরচ পড়বে মাত্র ৭০০ টাকা করে।
বিদেশে বসে ভোট দিতে অ্যাপে নিবন্ধনের জন্য প্রত্যেক ভোটারেরই লাগবে একটি করে আন্তর্জাতিক সিমকার্ড।
একই সাথে অ্যাপে জিও লোকেশন চালু থাকার কারণে বাংলাদেশে বসে কোনোভাবেই অ্যাপটি ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছে ইসির প্রবাসী ভোটার প্রকল্পের টিম লিডার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালীম আহমাদ খান।
প্রবাসীরা ছাড়াও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন যাঁরা
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, জাতীয় নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রেই গণভোটের জন্য আলাদা ব্যালটের ব্যবস্থা থাকবে। গণভোটে ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
এ সময় উপদেষ্টা আরও জানান, পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা চালু হওয়ার ফলে বিশেষ পেশা বা কারণে যাঁরা সশরীরে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারবেন না, তাঁরাও তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন।
এর আগে, আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছিলেন, চার শ্রেণির ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। নিবন্ধিত ব্যক্তিদের নির্ধারিত পদ্ধতিতে যথাসময়ে পোস্টাল ব্যালট পেপার পাঠানোর পর ভোট দিয়ে দেশে ফেরত আনা হবে। তবে কোনো প্রবাসী নিবন্ধন করার পর দেশে এসে ভোট দিতে পারবেন না।
ইসির তথ্যমতে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন যাঁরা—
১. প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটার
২. নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি
৩. আইনি হেফাজতে থাকা ভোটার
৪. নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবী
১৮ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উদ্বোধন করেন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৪৮টি নির্দিষ্ট দেশে ভোটার নিবন্ধনের সময়সূচি ঘোষণা করেন।
প্রথম ধাপের নিবন্ধন ১৯ থেকে ২৩ নভেম্বর পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসীদের জন্য হয়েছে। পরবর্তী ধাপে ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বর উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়া, ২১ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর ইউরোপ, ৪ থেকে ৮ ডিসেম্বর সৌদি আরব, ৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ১৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশসমূহে ভোটার নিবন্ধন চলবে।
