■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
হংকংয়ের একটি আবাসিক কমপ্লেক্সের একাধিক বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত বেড়ে ৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্তত ২৭৯ জন এখনো নিখোঁজ। হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে ২৯ জনকে। তাঁদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা সঙ্কটজনক।
গতকাল বুধবার (২৬ নভেম্বর) আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
হংকংয়ের উত্তরাঞ্চলের তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্ট কমপ্লেক্সের অন্তত তিনটি আবাসিক ভবনের বাঁশের মাচায় প্রথমে আগুন ধরে যায়। এরপর তা ভবনের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আটটি ব্লক নিয়ে গঠিত ওই কমপ্লেক্সে প্রায় ২ হাজার ফ্ল্যাট রয়েছে।
আগুন নেভাতে ৮০০ জনের বেশি দমকল কর্মী কাজ করছেন। ১৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কমপ্লেক্সটি জ্বলছে।
ফায়ার সার্ভিস ৪৪ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে। এরমধ্যে ৪০ জন ঘটনাস্থলে এবং চারজন হাসপাতালে মারা গেছেন। এছাড়া গুরুতর অবস্থায় আছেন আরও ৪৫ জন।
রাতজুড়ে দমকলকর্মীরা আগুন নেভাতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ঘন কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে গেছে। ৩১ তলা টাওয়ারগুলোয় আগুনের লেলিহান শিখা রাতের অন্ধকারকে লাল করে তোলে। ঘটনাস্থল ছিল তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্ট আবাসিক এলাকা।
দমকল বিভাগের উপপরিচালক ডেরেক আর্মস্ট্রং চান জানান, অন্ধকারের কারণে উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়েছিল। এখনো দুটি ভবনে প্রবেশে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তেও ভেতরের তাপমাত্রা খুব বেশি।’
এর আগে তিনি বলেন, ভেতরে আটকে পড়া বাসিন্দাদের আর্তচিৎকারের জবাব দিতে দমকলকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছিলেন। ভেঙে পড়া ধ্বংসস্তূপ তাঁদের কাজে বড় বাধা সৃষ্টি করছিল। দমকল বিভাগ জানায়, ঘটনাস্থলেই ৯ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, অনেক বাসিন্দা তাঁদের ফ্ল্যাটেই আটকে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘ম্যানস্লটার বা মানব হত্যার’ কি অভিযোগ আনা হচ্ছে। তবে তাঁদের সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হংকংয়ের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। যুদ্ধের সময় জাপানি বাহিনী তখন ব্রিটিশ শাসিত এই ভূখণ্ড দখলে রেখেছিল। এর আগে ১৯৯৬ সালে কাউলুনের গারলে বিল্ডিংয়ে অগ্নিকাণ্ডে ৪১ জনের মৃত্যু হলে সেটিকেই শান্তিকালীন সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
বুধবার এই আগুনকে সর্বোচ্চ মাত্রার ‘লেভেল ফাইভ অ্যালার্ম’ ঘোষণা করে দমকল বিভাগ। ঘটনাস্থলে ৫৭ বছর বয়সী বাসিন্দা সো বলেন, ‘সম্পত্তি নিয়ে এখন ভাবার কিছু নেই। আমরা শুধু চাই সবাই, বয়স্ক হোক বা শিশু, যেন নিরাপদে ফিরে আসে। মনটা ভেঙে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনো অনেকে ভেতরে আটকে আছে।’
অনেকেই নিকটবর্তী ওভারহেড ফুটব্রিজে জড়ো হয়ে হতভম্ব দৃষ্টিতে আগুন দেখছিলেন এবং ছবি তুলছিলেন। ধোঁয়া তখনো ভবনের জানালা ফুঁড়ে বের হচ্ছিল। অগ্নিনির্বাপণে ১২৮টি ফায়ার ট্রাক এবং ৫৭টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়।
এদিকে কর্তৃপক্ষ একটি হটলাইন চালু করেছে। আশ্রয়হীন বাসিন্দাদের জন্য কাছের দুটি কমিউনিটি সেন্টারে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রও খোলা হয়েছে। আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে নিকটবর্তী মহাসড়কের কয়েকটি অংশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কর্মকর্তা। এরমধ্যে দুজন কোম্পানিটির পরিচালক। অন্যজন পরামর্শক।
আগুন লাগার পর অস্বাভাবিকভাবে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে অনেকে বের হয়ে আসতে পারেননি। আর ভবনের ভেতর পলিস্টাইরিনসহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থ পাওয়া গেছে। যা আগুন জ্বালাতে আরও সহায়তা করেছে। এছাড়া কমপ্লেক্সে থাকা নিরাপত্তা জাল, ক্যানভাস এবং প্লাস্টিকের কভারগুলো সেফটি স্ট্যান্ডার্ড পূরণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
