আরও ৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের অভিযোগে আরও ৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে তাঁরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।

 এ বছরের বিভিন্ন সময়ে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের হাতে হাতকড়া, পায়ে শেকল বেঁধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হলেও শুক্রবার ফেরত আসা বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি।

পরে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিদের পরিবহনসহ তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়া হয়।

ফেরত আসা ৩৯ জনের মধ্যে ২৬ জনই নোয়াখালীর। অন্যদের মধ্যে কুমিল্লা, সিলেট, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের ২ জন করে এবং চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নরসিংদীর একজন করে রয়েছেন।

চলতি বছরে এর আগে আরও ১৮৭ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র।

ফেরত আসা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র নিয়ে ব্রাজিল গিয়েছিলেন। সেখান থেকে মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন তাঁরা। অন্য পাঁচজনের মধ্যে দুজন সরাসরি এবং তিনজন দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। এরপর সবাই যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আবেদন করলেও আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, ব্রাজিলে বৈধভাবে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হলেও তাঁরা আসলে কোথায় যাচ্ছেন—ব্রাজিল নাকি যুক্তরাষ্ট্র, সে বিষয়ে সরকার বা এজেন্সিগুলোর কোনো সতর্কতা ছিল কি? একেকজন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে শূন্য হাতে ফিরলেন। এর দায় কে নেবে?

শরিফুল হাসান আরও বলেন, যে এজেন্সিগুলো তাঁদের পাঠিয়েছে এবং অনুমোদনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। নতুন করে ব্রাজিলে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার আগে সরকারের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

ফেরত আসা শ্রমিক ও বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, এ বছর বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিদের হাত-পায়ে শিকল পরানো হয়েছিল। তবে এবার সেই অবস্থা দেখা যায়নি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত চার্টার্ড ও সামরিক ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

এর আগে গত ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। তার আগে ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল একাধিক দফায় আরও ৩৪ জন ফেরত আসেন।

২০২৪ সালের শুরু থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ২২০ জনের বেশি বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনে অবৈধ অভিবাসীদের আদালতের আদেশ বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে ফেরত পাঠানো যায়। আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হলে দেশটির অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইসিই) অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *