হাসিনার ৫, রেহানার ৭ ও টিউলিপের ২ বছর কারাদণ্ড

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনাকে ৫ বছর, শেখ রেহানাকে ৭ বছর ও শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিককে ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম এই রায় ঘোষণা করেন।

এই মামলায় সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে দেওয়া হয়েছে ৫ বছরের কারাদণ্ড।

একই মামলায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং গৃহায়ন ও গণতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের যারা প্লট বরাদ্দে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তাদের ১২ জনকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

খালাস দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন—গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) মো. অলিউল্লাহ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যানের মো. আনিছুর রহমান মিঞা পিএএ, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সাবেক পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মাজহারুল ইসলাম এবং সাবেক উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) নায়েব আলী শরীফ।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ পিপি তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, মামলার সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মঈনুল হাসান বলেন, আমরা সব সাক্ষ্য-প্রমাণে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। সিদ্ধান্ত আদালতের। আমাদের প্রত্যাশা সর্বোচ্চ শাস্তির।

রায় ঘোষণা কেন্দ্র করে বাড়তি নিরাপত্তা গ্রহণ পড়তে দেখা গেছে। আদালতের প্রধান ফটকগুলোতে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সর্তক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে। বিশেষ আদালতের এজলাসের সামনের বারান্দায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, নিয়মিত নিরাপত্তার পাশাপাশি বাড়তি সতর্কতা রয়েছে। সন্দেহজনদেরও জিজ্ঞাসা করছেন পুলিশ সদস্যরা।

গত ২৫ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের তারিখ ধার্য করা হয়। আজ বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু হয়। আদালত রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পড়ে শোনান। রায় ঘোষণার সময় কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে আদালতে হাজির করা হয়।

শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য সব আসামি পলাতক রয়েছেন। আদালত সাজাপ্রাপ্ত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ৩১ জুলাই আদালত এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

গত ১২,১৩ ও ১৪ জানুয়ারি দুর্নীতির দমন কমিশন দুদক শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের সদস্য ও অন্যদের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা দায়ের করে। এরমধ্যে তিনটি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে গত ২৭ নভেম্বর। তিন মামলায় শেখ হাসিনাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুই মামলায় পৃথকভাবে শেখ হাসিনার ছেলে জয়কে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও মেয়ে পুতুলকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকা অন্যান্যদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

গত ২৫ মার্চ ছয় মামলায় আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করে দুদক।

শেখ রেহানার প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থেকে তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে, অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গণ কর্মচারিদের বা রাজউক কর্মচারিদের প্রভাবিত করে শেখ রেহানাকে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর মাকে প্লট বরাদ্দে বিশেষ ক্ষমতা বলে প্রত্যক্ষ প্রভাব খাটিয়েছেন। অন্যদিকে রাজউকের প্রকল্প বরাদ্দ বিষয়ক কর্মচারিরা নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন।.

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনাসহ তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে টিউলিপ সিদ্দিকের নামও আসে। দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে বাংলাদেশে তদন্ত শুরুর পর সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারের (ইকোনমিক সেক্রেটারি) পদ থেকে গত ১৪ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন তিনি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *