রাজধানীতে আবারও ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল নরসিংদী

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

দুই দিনের ব্যবধানে আবারও ভূমিকম্পে কাঁপল রাজধানী। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ভূমিকম্পটি হালকা মাত্রার ছিল। সকাল ৬টা ১৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর শিবপুরে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা।

রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৩৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে।

ইউরো-মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ৩৩ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্বে, আর নরসিংদী থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল ৩০ কিলোমিটার।

ভারতীয় ভূমিকম্পবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি এবং ইউরোপিয়ান-মেডিটারেনিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪.১।

এর আগে সর্বশেষ সোমবার (১ ডিসেম্বর) মধ্যরাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯। মিয়ানমারের মিনজিনে ছিল এর কেন্দ্রস্থল। চট্টগ্রামসহ দেশের কিছু অংশে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

এদিকে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে বঙ্গোপসাগরে ৪.২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। 

তার আগে গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় ভূমিকম্প হয়। ওই দিন বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডে এ ভূমিকম্প হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে। ওই দিন ভোরের দিকে সিলেটে ও কক্সবাজারের টেকনাফে দুই দফা ভূকম্পন অনুভূত হয়।

তবে এর আগে ২১ নভেম্বর, শুক্রবার এবং পরদিন শনিবার প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশে চারবার ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে দেশে ১১ জন নিহত হন। আহত হন ছয় শতাধিক মানুষ।

১৩ দিনের ব্যবধানে নরসিংদীতে পঞ্চমবার ভূমিকম্প 

১৩ দিনের ব্যবধানে নরসিংদীতে পঞ্চমবারের মতো ভূমিকম্প হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে গেছে কয়েকগুন। তবে বড় ধরনের কোনো ক্ষতির খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত মাসের ২১ তারিখে হওয়া ভূমিকম্পে নরসিংদীতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। ক্ষতিগ্রস্ত হয় শতাধিক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকালে আমরা সবাই ঘুমের মধ্যে ছিলাম। হঠাৎ ঘরের খাট আসবাবপত্রসহ ঘর কাঁপছিল। পরপর কয়েকবার কেঁপে ওঠার পর বুঝতে পারলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। 

তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী। এরই মধ্যে পরপর কয়েকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে তাই আমাদের মধ্যে আতঙ্কের পরিমাণটা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। 

ছোট ভূমিকম্পগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে চাপ কমানোর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া

রিখটার স্কেল অনুযায়ী ৮ মাত্রা বা তার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্পকে বলা হয় ‘গ্রেট আর্থকোয়েক’। সারা পৃথিবীতে এমন ভূমিকম্প বছরে গড়ে মাত্র ১টি ঘটে। ৭ মাত্রার ভূমিকম্পও খুব কম। বছরে মাত্র ১৮টির মতো। একটু নিচে নামলে, ৬ মাত্রার ভূমিকম্প দেখা যায় বছরে প্রায় ১২০ বার, আর ৫ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে প্রায় ৮০০ বার। এই ভূমিকম্পগুলোই সাধারণত খবরে আসে। এর নিচের মাত্রার ভূমিকম্প মানুষ খুব বেশি টের পায় না। কিছু মানুষ টের পেলেও এগুলোতে বাস্তব ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

তবে ৪ মাত্রার নিচের ভূমিকম্পও এখন খবর। কারণ, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে। ৪ মাত্রার নিচে যে ভূমিকম্প হয়, তার সংখ্যা অনেক বেশি। ৪ থেকে ৪ দশমিক ৯ মাত্রার হালকা ভূমিকম্প বছরে প্রায় ৬ হাজার ২০০ বার ঘটে। আর ৩ থেকে ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে বছরে ৪৯ হাজার বার। মানে দিনে শত শত বার। এদের বেশির ভাগই এত ক্ষুদ্র, সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারে না। এর চেয়ে আরও ছোট ভূমিকম্প, যেমন ২ কিংবা ১ মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিদিন হাজার হাজার বার পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ঘটে চলেছে।

এত সংখ্যক ছোট ভূমিকম্পের ভিড়ে একটা বিষয় নিশ্চিত। ৩ দশমিক ৯ মাত্রার নিচে ভূমিকম্প হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, এই মাত্রার ভূমিকম্প বছরে প্রায় ৪৯ হাজার বার ঘটে। সাধারণত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট বা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। এই ছোট ভূমিকম্পগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে চাপ কমানোর মতো স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *