অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ বৈধ ঘোষণা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামত প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে রিট খারিজের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলও খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের বৈধতা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকলো না।

বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে পর্যবেক্ষণসহ লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামত প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ রিটটি করেছিলেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন মহসিন রশিদ।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ড. শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এস এম শাহরিয়ার কবির।

আপিল বিভাগ আদেশে বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ ও গঠন প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজের হাইকোর্টের আদেশ সঠিক ও যথার্থ। আপিল বিভাগ এ কারণে হাইকোর্টের আদেশে হস্তক্ষেপ করছেন না। আপিল বিভাগের ৭ বিচারপতি সর্বসম্মতিক্রমে এ আদেশ দিয়েছেন।

এ ছাড়া নওগাঁর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন ইন্টারভেনার হলে তাঁর পক্ষে শুনানি করেন এ এস এম শাহরিয়ার কবির। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানি করেন।

আপিল বিভাগের আদেশের পর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘এই আদেশের ফলে এটি প্রতিষ্ঠিত হলো যে বর্তমান সরকার জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে গঠিত। যাকে ইংরেজিতে বলে উইল অব দ্য পিপল। এই সরকার যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তা মূলত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। উচ্চ আদালত আমাদের সংবিধানের এই মূলমন্ত্র আবার পুনর্ব্যক্ত করে আদেশ দিলেন।’

শিশির মনির আরও বলেন, ‘এই আদেশের ফলে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিশেষ করে তিনটা ম্যান্ডেট—নির্বাচন, বিচার এবং সংস্কারের বিষয়ে বৈধতার ব্যাপারে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না। এই আদেশের ফলে শূন্যতার আর কোনো জায়গা থাকবে না। এটি সুপ্রিম কোর্টের আদেশ দ্বারা আজকে প্রমাণিত হলো।’

তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট বলেছিলেন, এই সরকারের বৈধতার দুটো উৎস। একটি হলো লিগ্যাল ইন্সট্রুমেন্ট, আরেকটি হলো উইল অব দ্য পিপল। আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের এই ফাইন্ডিংকে পুনরায় ঘোষণা করলেন বৈধ হিসেবে এবং বললেন হাইকোর্ট বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, এখানে ইন্টারফেয়ার করার কিছু নেই। হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় সঠিক। তারপর বলেছেন উইথ অবজারভেশন। অবজারভেশনটা রায় প্রকাশ পেলে আমরা দেখতে পাব।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মহসীন রশিদ। পরে রিট খারিজ করে হাইকোর্ট বলেন, দেশের জনগণ বৈধতা দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। পরে তিনি আপিল বিভাগে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *