■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেওয়া হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। দীর্ঘ ১২ দিন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার পর দেশী-বিদেশী চিকিৎসক বোর্ডের সিদ্ধান্তে লন্ডন নেয়া হচ্ছে তাকে।
এ জন্য প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। কাতার সরকার রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে খালেদা জিয়াকে বহন করার জন্য।
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাকে বহন করতে কাতার সরকারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি মধ্যরাত বা শুক্রবার ভোরে ঢাকায় অবতরণ করতে পারে। অবতরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড়াল দেবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে সম্মত হয়েছে। পরবর্তী প্রক্রিয়া হিসেবে কাতার সিভিল এভিয়েশন অথবা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) লিখিত আকারে জানিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অবতরণের শিডিউল জানাবে। তবে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বেবিচক কোনো চিঠি পায়নি। বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেলেই তারা অ্যাম্বুলেন্সটি অবতরণের অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
সূত্র আরও জানায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় অবতরণ করতে পারে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে বিমানবন্দর সুইপিং করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যরাও বিমানবন্দরে অবস্থান নিয়েছেন। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি দেশে অবতরণ করলে তারা সেটিকে ইনস্পেকশন করবেন। তাদের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সের পর খালেদা জিয়াকে মেডিকেল হেলিকপ্টারে করে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বিমানবন্দরে নেওয়া হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্যতম এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন তাকে লন্ডন নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের আগামীকাল শুক্রবার ঢাকায় পৌঁছে শাশুড়ি খালেদা জিয়াকে নিয়ে ফের লন্ডনে যাওয়ার কথা। তবে জোবাইদা রহমানের দেশে ফিরতে কোনো কারণে দেরি হলে সে ক্ষেত্রে ছোট ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমানকে নিয়েই লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
ব্যক্তিগত সহকারী থেকে শুরু করে কয়েকজন চিকিৎসকও থাকবেন তাঁর সঙ্গে।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সঙ্গে আরও কিছু জটিলতা রয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া চিকিৎসা চলছে।
গত রাত থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে দুই দিকে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে রয়েছে পুলিশের উপস্থিতি। সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়া অন্যদের ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে, হাসপাতালের আশপাশে ভিড় ঠেকাতে ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
লন্ডন থেকে বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।
এছাড়া হাসপাতালে খালেদা জিয়ার পাশেই রয়েছেন ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি।
খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হচ্ছেন যে ১৪ জন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তার উপদেষ্টা ও সফরসঙ্গী ড. এনামুল হক চৌধুরী।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে মোট ১৪ জন সফরসঙ্গী থাকবেন। তারা হলেন—খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মো. আনামুল হক চৌধুরী, ডা. ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. শাহাবুদ্দীন তালুকদার, ডা. নুরুদ্দীন আহমদ, ডা. জাফর ইকবাল ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। আরও থাকবেন, হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, সৈয়দ শামীন মাহফুজ, আব্দুল হাই মল্লিক, মাসুদার রহমান, ফাতেমা বেগম ও রুপা শিকদার।
ড. এনামুল হক বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে কাতার থেকে পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়া হবে। কালকে সম্ভব না হলে আগামী শনিবারের মধ্যে তাকে লন্ডন নেওয়া হবে।
এদিকে দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে আজ মধ্যরাত বা সকালে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবেন খালেদা জিয়া। কাতারের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা ছাড়বেন তিনি।
তিনি বলেন, লন্ডনে নির্ধারিত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে। যাত্রাপথে চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য ডাক্তারদের একটি দল তার সঙ্গে যাবেন। চিকিৎসকদের পরামর্শেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। চিকিৎসার জন্য ১১৭ দিন লন্ডনে অবস্থান শেষে গত ৬ মে দেশে ফেরেন তিনি।
