খালেদা জিয়া লন্ডন যেতে পারেন বুধবার

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স মঙ্গলবার ঢাকায় অবতরণের অনুমতি চেয়েছে। অনুমতি পেলে পরদিন বুধবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জার্মান অ্যাভিয়েশন কোম্পানি এফএআই অ্যাভিয়েশন গ্রুপ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ফ্লাইট শিডিউল দাখিল করেছে। এতে ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অবতরণ ও ১০ ডিসেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। বেবিচক ইতিমধ্যে আবেদনটি প্রয়োজনীয় অনুমোদনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

বেবিচকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কাতার সরকার এফএআই অ্যাভিয়েশন গ্রুপের কাছ থেকে নতুন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া করেছে।

ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি হলো বোম্বার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০৪ (সিএল৬০)। এটি দীর্ঘ দূরত্বের মেডিক্যাল ইভাকুয়েশন ফ্লাইটে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং জার্মানির শীর্ষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ও মিশন-ক্রিটিক্যাল এভিয়েশন সেবাদাতাদের দ্বারা পরিচালিত। চ্যালেঞ্জার ৬০৪ তার শক্তিশালী ট্রান্সকন্টিনেন্টাল সক্ষমতার জন্য পরিচিত, যা ঢাকা–লন্ডন মেডিকেল ট্রান্সফারের জন্য উপযোগী।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যান তার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান। শনিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরের পর শাশুড়ি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে যান তিনি।

এর আগে, লন্ডন থেকে শুক্রবার ঢাকায় পৌঁছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। বিমানবন্দর থেকে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। সেখানে কয়েক ঘণ্টা থেকে দুপুরে ধানমন্ডিতে বাবার বাড়িতে যান। পরে রাতে আবার হাসপাতালে যান। এ সময় তার আগমনকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

১৪ দিন ধরে খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটি কিছুটা উন্নতির দিকে। হৃদ্‌যন্ত্রে জটিলতাও কিছুটা কমেছে। তবে অন্য সমস্যাগুলো অনেকটাই অপরিবর্তিত।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসকসহ মোট ১৪ জন সফরসঙ্গী লন্ডনে যাবেন। তারা হলেন- খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. মোহাম্মদ আনামুল হক চৌধুরী, ডা. ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. শাহাবুদ্দীন তালুকদার, ডা. নুরুদ্দীন আহমদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।

আরও থাকবেন হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, সৈয়দ শামীন মাহফুজ, মো. আব্দুল হাই মল্লিক, মো. মাসুদার রহমান, ফাতেমা বেগম ও রূপা শিকদার।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সঙ্গে আরও কিছু জটিলতা রয়েছে।

এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া চিকিৎসা চলছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে দুই দিকে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে রয়েছে পুলিশের উপস্থিতি। সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়া অন্যদের ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে, হাসপাতালের আশপাশে ভিড় ঠেকাতে ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *