:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
রাজধানীর গুলশান থানায় অস্ত্র আইনের মামলায় বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা ঠিকাদার এসএম গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে শামীম এবং তার সাত দেহরক্ষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।
ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম রায়ে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
এর মাধ্যমে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে এই প্রথম কোন মামলার রায় হলো।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী সরকারি কৌঁসুলি সালাউদ্দিন হাওলাদার ও সাবিনা আক্তার দীপা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রায়ের সময় জি কে শামীম ও তার ৭ দেহরক্ষী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, জাহিদুল ইসালাম, শহিদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, সামসাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিজ কার্যালয়ে র্যাবের হাতে সাত দেহরক্ষীসহ গ্রেফতার হন জি কে শামীম। পরে তার বাড়ি ও অফিসে র্যাব অভিযান চালিয়ে আটটি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গুলি, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর এবং নগদ প্রায় এক কোটি ৮১ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং মদ জব্দ করে। পরদিন তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিং আইনে তিনটি মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে শামীমকে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক ও জুয়ার ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করা হয়। একই বছরের ২৭ অক্টোবর অস্ত্র মামলায় চার্জশিট জমা দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি একই আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি আমিনুল ইসলাম জামালপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন মর্মে ডকুমেন্ট দেখালেও তা যাচাইয়ে সত্যতা মেলেনি। পরে ওই অস্ত্রের নকল কাগজপত্র নিয়ে ২০১৭ সালে প্রথমে এস.এম বিল্ডার্স কোম্পানিতে যোগদান করেন। এরপর ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আসামি জিকে শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে যোগদান করেন। সে মূলত অবৈধ অস্ত্রটি ৭০ হাজার টাকায় ক্রয় করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে।
এর মধ্যে অস্ত্র ও মুদ্রা পাচার মামলায় সবাইকে আসামি করা হলেও মাদক আইনের মামলায় শুধু শামীমকে আসামি দেখানো হয়। প্রত্যেক মামলাতেই তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন শামীম। র্যাব সদর দপ্তর, সচিবালয়ে ও কয়েকটি হাসপাতালের নতুন ভবনসহ অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ ছিল শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের হাতে রয়েছে। এসব প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি আমিনুল ইসলাম জামালপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়েছেন মর্মে ডকুমেন্ট দেখালেও তা যাচাইয়ে এর সঠিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে ওই অস্ত্রের নকল কাগজপত্র নিয়ে ২০১৭ সালে প্রথমে এসএম বিল্ডার্স কোম্পানিতে যোগদান করেন। পরে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আসামি জি কে শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে যোগদান করে কাজ করে আসছিলেন। তিনি মূলত অবৈধ অস্ত্রটি ৭০ হাজার টাকায় কিনে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করেন।
এ ছাড়া অন্যান্য আসামি নিরাপত্তার অযুহাতে অস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও তারা শর্ত ভঙ্গ করে অস্ত্র প্রকাশ্যে বহন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করে লোকজনের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসা করে স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন।
শামীম নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। প্রাইমারি স্কুল ও হাইস্কুল পাস করার পর শামীম ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় বেড়ে ওঠেন। ক্ষমতার দাপট ছিল আকাশসমান। সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীম প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজই জি কে শামীম নিয়ন্ত্রণ করেন। বিএনপি শাসনামলেও গণপূর্তে তিনি ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি। বাংলাদেশের সব ঠিকাদারকে গণপূর্তে কাজ করতে হলে তাঁকে বলে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের প্রথম সারির সব ঠিকাদার তাঁর বাইরে ভয়ে কথা বলার সাহস পেতেন না।