:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে পুণ্যার্থীদের নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জন হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৪ জন নারী, ১৩ জন শিশু ও ১২ জন পুরুষ রয়েছেন।
সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে রোববার ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান দীপঙ্কর রায় সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মোট ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নৌকাডুবিতে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পলি রানী (১৪), লক্ষ্মী রানী (২৫), শোভা রানী (২৭), প্রিয়ান্তা রানী (৫), খুকি রানী (৩৫), সুমিত্রা রানী (৫৭), অমল চন্দ্র (৩৫), দীপঙ্কর (৫), প্রলিমা রানী (৫৫), তারা রানী (২৪), শোনেকা রানী (৬০), ফাল্গুনি রানী (৫৫), প্রমিলা রানী (৭০), ধনবালা (৪৭), সফলতা রানী (৪০), শিমলা রানী (৩৫), উশোষী রানী (২), তনুশ্রী রানী (২), শ্রেয়শী রানী (২), বিমল চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী (৩৫), জ্যোতিষ চন্দ্র (৫৫), রূপালি রানী (৩৫) ও নৌকার মাঝি হাসান আলীর (৫২) নাম জানা গেছে। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
উদ্ধার কার্যক্রমের কন্ট্রোল রুমের প্রধান ও পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘গতকাল নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের তথ্য অনুযায়ী ৬৫ জনের একটি তালিকা করা হয়েছিল। সেখানে একাধিকবার এসেছে এমন নামও রয়েছে।’ সে হিসাবে আজ ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধারের পর নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ৫০ জন।
এদিকে মর্মান্তিক এই নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজের স্বজনরা সোমবার সকালে সূর্য ওঠার পর থেকেই ঘটনাস্থল করতোয়ার আওলিয়ার ঘাট ও এর আশপাশে নিজ উদ্যোগে তাদের নিখোঁজদের খোঁজ করছেন।
উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় রাজশাহী ও রংপুর থেকে ২টি ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে রয়েছে। তারা ঘটনাস্থল থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বরদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপরপাড়ে) মহালয়া উপলক্ষে এক ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। এই ধর্মসভায় যোগ দিতে জেলার বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন শ্যালো মেশিনচালিত নৌকাযোগে যাচ্ছিল। দুপুরের দিকে নদীর মাঝপথে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নৌকাটি উল্টে গিয়ে ডুবে যায়। সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করে। পরে জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়।
মহালয়া উপলক্ষে এদিন অধিক মানুষের সমাগম ঘটে। চারটি নৌকা পারাপারের জন্য চলাচল করলেও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে বিপুল সংখ্যক মানুষ নদী পার হতে অপেক্ষায় থাকে। ফলে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নৌকায় উঠলে মাঝ নদীতে নৌকা ডুবে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সাথে সাথে উপস্থিত জনতা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধার অভিযান চালায়। মৃত ব্যক্তি সৎকারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যেককে ২০ হাজার এবং আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা প্রদানের ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।