ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

মাথায় গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং রোববার রাতে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে রোববার সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জাফর ইকবাল ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি টেলিফোন কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

দুই দিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে জানিয়ে প্রেস উইং বলেছে, এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মেডিকেল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল এবং ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলেছে, তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের সাংবাদিকদের বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমান হাদিকে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে ধার করে অর্ধকোটি টাকা জোগাড় করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে না পারায় সরকারের সমালোচনা করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেন আবদুল্লাহ আল জাবের। এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার এখনো দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।

এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, তাঁর মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’ এবং ক্লিনিক্যালি তিনি আগের মতোই অত্যন্ত আশঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়েছেন। এই অবস্থায় তাঁকে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনাও চলছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের এক সদস্য।

আজ রোববার সকালে মেডিকেল বোর্ডের জরুরি বৈঠক শেষে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের এক চিকিৎসক এসব তথ্য জানান।

ওই চিকিৎসক বলেন, ‘ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি কেস সামারি প্রস্তুত করে দেওয়া হয়েছে। বিদেশের কোনো হাসপাতাল সেই কেস সামারি পর্যালোচনা করে রোগীকে গ্রহণ করলে তবেই বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আসবে।’

হাদির চিকিৎসায় যুক্ত ওই চিকিৎসক আরও জানান, ‘আজ সকালে মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকের আগেই হাদির সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। পুনরায় সিটি স্ক্যানে মস্তিষ্কে ব্যাপক ইডেমা (পানি জমা) ও অক্সিজেনের ঘাটতির প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ব্রেনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মস্তিষ্কের কিছু অংশে ছিটেফোঁটা রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণও পাওয়া গেছে। সর্বশেষ সিটি স্ক্যান অনুযায়ী হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা জটিল। ফুসফুসের অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। বর্তমানে লাইফ সাপোর্টের মাধ্যমে হাদির শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখা হয়েছে। তবে তাঁর কিডনির কার্যকারিতা স্বাভাবিক রয়েছে। দিনে প্রায় ৪ লিটার ইউরিন আউটপুটের ভিত্তিতে ফ্লুইড ব্যালেন্স করা হচ্ছে।’

এর আগে রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের ভারসাম্যহীনতা থেকে যে ডিসেমিনেটেড ইনট্রাভাসকুলার কোয়াগুলেশন (ডিআইসি) দেখা দিয়েছিল, সেটির অবস্থাও বর্তমানে অপরিবর্তিত রয়েছে এবং নতুন করে কোনো সংকট তৈরি হয়নি বলে জানান চিকিৎসক।

তাঁর মতে, বড় উদ্বেগ মস্তিষ্ক নিয়ে। ব্রেন স্টেম ইনজুরি এখনো গুরুতর অবস্থায় রয়েছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’ তিনটি মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে বলে জানান তিনি।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে চিকিৎসকরা জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনার পর ওসমান হাদির অবস্থা ছিল অত্যন্ত সংকটাপন্ন। 

দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। শকে চলে যাওয়ায় দ্রুত সিপিআর দেওয়ার পর সাময়িকভাবে রক্তচাপ কিছুটা স্থিতিশীল হয়। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *