■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে উগ্র ভারতীয়দের দ্বারা হামলার ঘটনার পর সব ধরনের কনস্যুলার সেবা ও ভিসা দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, হাইকমিশনে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কনস্যুলার সেবা ও ভিসা দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টা নাগাদ তিনটি গাড়িতে করে উগ্রবাদী সংগঠন ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’র ২০-২৫ জনের একটি দল। তারা সেখানে প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। পাশাপাশি তারা ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হুমকি দেয়।
পরদিন রোববার বাংলাদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে হাইকমিশনে অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’র এই কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। তবে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সত্য নয় বলে দাবি করে দিল্লি। দেশটির ভাষ্য, নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটেনি। বরং তারা বাংলাদেশের ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্লোগান দেয় এবং বাংলাদেশে সব সংখ্যালঘুর সুরক্ষার দাবি জানায়।
পরে অবশ্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এ বিষয়ে ভারতের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাকে হত্যার হুমকি দেওয়া কথা শুনেছেন বলে জানান উপদেষ্টা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ২০-২৫ জনের একটি হিন্দু চরমপন্থি সংগঠনের লোকজন এতদূর পর্যন্ত আসতে পারবে কেন? একটা সুরক্ষিত এলাকা, তার মানে তাদের আসতে দেওয়া হয়েছে তাহলে। যেভাবে হোক তারা আসতে, আসতে পারার কথা না কিন্তু এবং তারা সেখানে হিন্দু নাগরিকের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে চলে গেছে। তা না কিন্তু। তারা অনেক কিছু বলেছে, সেটা আমরা জানি।
তৌহিদ হোসেনের বক্তব্যের পর রোববার রাতে হাইকমিশনে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র বন্ধ করে দিলেন হিন্দুত্ববাদী বিক্ষোভকারীরা
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র ভাঙচুর করেছেন হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (বিএইচপি), হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের সদস্যরা সোমবার শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের পর সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কয়েক বছর ধরে ‘ডিইউডিজিটাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের ঘটনার প্রতিবাদে শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কে জমায়েত হন বিএইচপি, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের প্রায় শ তিনেক সদস্য। এরপর তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাংলাদেশের ভিসা অফিস ঘেরাও করেন। বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ, দীপু দাসের হত্যার বিচার ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান।
পরে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে পাঁচজনের একটি প্রতিনিধিদল ভিসা অফিসে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এবং প্রতিবাদস্বরূপ ভিসা অফিস বন্ধ রাখতে বলে।
এ সময় প্রতিনিধিদলের এক সদস্য ডিইউডিজিটালের কর্মকর্তাকে ফোন করে বলেন, ‘আপনাকে একটাই অনুরোধ, এই অফিসের তালা খুলবে না। আপনার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিন, এই অফিসের তালা খুলবে না। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হবে, আপনি এখানে ব্যবসা করবেন, সেটা হবে না। বাংলাদেশের ভিসাসংক্রান্ত ব্যানার অথবা বোর্ড আজকের মধ্যে সরিয়ে নিন।’
প্রতিনিধিদলের ওই সদস্য পরে স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, তাঁরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে জানাবেন। বাংলাদেশে তাঁদের হিন্দু ভাইদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। এখান থেকে যেন কোনো ভারতীয়, কোনো হিন্দু বাংলাদেশে না যায়, ব্যবসা না করে, সেটা তাঁরা চান।
আগরতলায়ও বাংলাদেশের ভিসা কার্যক্রম স্থগিত
নিরাপত্তার কারণে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন থেকেও সব ধরনের কনসুলার সেবা ও ভিসা কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনের সামনে এ সংক্রান্ত নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সন্ধ্যায় দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনেও একই সেবা দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে। দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ টানানো হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ভারতে বাংলাদেশের এই দুই মিশনে এসব সেবা বন্ধ থাকবে।
