ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে গোপনে বৈঠক জামায়াত আমিরের

■ নাগরিক নিউজ ■ 

এক ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি দাবি করেছেন, ভারতীয় ওই কূটনীতিকই তাকে বৈঠকটি গোপন রাখতে বলেছেন। এজন্য এটি গোপন রাখা হয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ভোটের পর একটি জাতীয় সরকার গঠিত হলে তাতে যোগ দিতে আগ্রহী তার দল। তিনি বলেন, দেশকে অন্তত পাঁচ বছরের জন্য একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিতে সব রাজনৈতিক দলের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।

ঢাকার একটি আবাসিক এলাকায় নিজের কার্যালয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জাতীয় সরকারের ক্ষেত্রে দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচি একটি যৌথ লক্ষ্য হওয়া উচিত। তার ভাষায়, ‘যদি দলগুলো একসঙ্গে আসে, তাহলে আমরা সবাই মিলে সরকার চালাবো।’

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, যে দল সংসদে সবচেয়ে বেশি আসন পাবে, সেই দলের নেতাই প্রধানমন্ত্রী হবেন। জামায়াত সর্বোচ্চ আসন পেলে তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী হবেন কি না—সে সিদ্ধান্ত দল নেবে বলে জানান তিনি।

সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও পরবর্তী সময়ে ভারতে অবস্থানকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, তার পতনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ভারত দীর্ঘদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছিল।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার প্রতি খোলা মনোভাব রাখতে হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।’

এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ভারত সরকারের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে জামায়াতের অতীত সম্পর্ক প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক চায় এবং কোনো একটি দেশের দিকে ঝুঁকে পড়তে আগ্রহী নয়।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কোনো সরকারই স্বস্তিতে থাকবে না।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সম্প্রতি রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে মেয়াদের মাঝপথে পদ ছাড়তেও তিনি প্রস্তুত। তবে বুধবার ফোনে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার সময় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান রাষ্ট্রপতি।

পাকিস্তানের সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক’ সম্পর্কের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে জামায়াত আমির বলেন, আমরা সবার সঙ্গে ভারসামপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখি। আমরা কোনও একটি নির্দিষ্ট দেশের দিকে ঝুঁকতে আগ্রহী নই। এরবদলে আমরা সবাইকে সম্মান করি এবং সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক চাই।

সাম্প্রতিক সময়ে জেন-জি অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মের জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সঙ্গে জামায়াতের জোট গঠন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনা তৈরি হয়েছে। জনমত জরিপগুলোর তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ বছর পর নির্বাচনে ফিরে জামায়াত এবার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকতে পারে এবং বড় জয় পেতে যাওয়া বিএনপির সঙ্গে তাদের ব্যবধান খুব বেশি হবে না। এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের অংশীদার ছিল জামায়াত।

২০১৩ সালে আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানো ও ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে পুনরায় বৈধতা পাওয়া দলটি বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বিষয়ে নিজেদের অস্বস্তির কথা জানিয়েছে। শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জামায়াত অন্তর্ভুক্ত কোনও সরকার স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *