:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধ করার কারণে আরও ১১২ কোটি ডলার কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। গত বুধবার রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। আকুর বিল সমন্বয়ের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে তা কমে ৩২ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
তবে আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ আরও ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন কম। সংস্থাটির হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। এ ব্যবস্থায় সংশ্নিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর সুদসহ আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদরদপ্তর। দায় পরিশোধের মতো রিজার্ভ না থাকায় গত অক্টোবরে আকু থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে চরম আর্থিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কা।
ব্যাংকারদের মতে, বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফেরাতে আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগের মধ্যেও সংকট যায়নি। নতুন এলসি কমলেও আগের দায় পরিশোধের চাপ রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে।
রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সম্প্রতি এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রতিশ্রুত ২৫ কোটি ডলার রিজার্ভে যোগ হয়েছে। নতুন বছরে আইএমএফের প্রতিশ্রুত ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ ছাড় শুরুর আশা করা হচ্ছে। তবে সংস্থাটি থেকে ঋণ নিতে বাংলাদেশকে কিছু সংস্কার করতে হবে। শর্তের অন্যতম হলো-আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রিজার্ভের হিসাব করতে হবে। বিশেষ করে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে জোগান দেওয়া ৭ বিলিয়ন ডলারসহ বিভিন্ন তহবিলে দেওয়া ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতে সম্মত হয়েছে। সে বিবেচনায় চলতি সপ্তাহে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ নামবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
অনেক ব্যাংকের কাছে এখন আমদানি দায় পরিশোধের মতো প্রয়োজনীয় ডলার নেই। যে কারণে ছোট আমদানিকারকদের এলসি খুলতে চাচ্ছে না। এ সময়ে সরকারি এলসির দায় মেটাতে কোনো ব্যাংক যেন ব্যর্থ না হয়, সেজন্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২২ সালের শেষ কর্মদিবসে গত বৃহস্পতিবার ১৪ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। সব মিলিয়ে ২০২২ সালে বিক্রি করা হয়েছে ১ হাজার ২৬১ কোটি ডলার। এর মধ্যে শেষ ছয় মাস তথা জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৪৭ কোটি ডলার। ফলে ডলারের ওপর সৃষ্ট চাপ কমবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০১৭ সালের ২২ জুন। এরপর থেকে করোনার প্রভাব শুরুর আগপর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামার মধ্যে ছিল। করোনার প্রভাব শুরুর পর বিশ্ববাজারে সুদহার অনেক কমে আসে। তখন বিশ্বের অনেক দেশ বিদেশি ঋণ কমালেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়। ২০২১ সালের মধ্যে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে এমন পথ বেছে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল। তবে করোনাপরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেশিরভাগ জিনিসের দর বেড়েছে। এরপর রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের জুন শেষে ৪১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। গত এক বছরে ১৩ বিলিয়নের বেশি কমে এ পর্যায়ে নেমেছে।