:: পঞ্চগড় প্রতিনিধি ::
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ‘সালানা জলসা’ কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ১৩টি মামলা হয়েছে। সব মিলিয়ে আসামি ১১ হাজার। এরমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ১৩৫ জন।
পুলিশ জানায়, ১৩ মামলার ১১টি পঞ্চগড় সদর ও বোদা থানায় ২টি দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩টি বাদে বাকি ১০টি মামলা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (৭ মার্চ) রাতে করা ৩টির মামলার বিষয় নিশ্চিত করেন পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার (এসপি) এমএম সিরাজুল হুদা।
তিনি বলেন, ‘আমরা আরও মামলা করব। ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে। বিনা কারণে কাউকে হয়রানি করা হবে না। কেউ যেন হয়রানি না হন, সেটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’
৩ মার্চ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ‘সালনা জলসা’ কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় দুজন মারা যান। আহত হন অন্তত ৬০ জন। এ ঘটনায় প্রথমে ৩টি মামলা করেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষে জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশের চৌধুরী। ৪ মার্চ করা এসব মামলায় আসামি করা হয় ৬ হাজার ৬০০।
৫ মার্চ মামলা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাবের পক্ষ থেকে একটি ও পুলিশের পক্ষ থেকে ২টিসহ মোট ৩টি মামলা করা হয়। আসামি করা হয় ১ হাজার ৬০০। একদিন পরেই আরও ৪টি মামলা করে পুলিশ। আসামি করা হয় ২৫০০।
উল্লেখ্য, পঞ্চগড় শহরের উপকণ্ঠে আহমদনগর এলাকায় আহমদিয়া জামাতের জলসা বন্ধের দাবিতে গত শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। সেখান থেকে তাঁরা মিছিল নিয়ে করতোয়া সেতুর দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁদের থামিয়ে দেয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর চৌরঙ্গী মোড়সংলগ্ন সিনেমা হল সড়ক থেকে একদল বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে এসে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। তখন পুলিশ ধাওয়া দিলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। একদল বিক্ষোভকারী আহমদনগর এলাকায় গিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অন্তত শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় এ পাল্টাপাল্টি হামলা চলে। এ ঘটনায় দুই তরুণ নিহত, পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হন।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়েন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আহমদিয়াদের জলসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর থেকেই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বাড়িঘরে কোনো কিছু না থাকায় অনেকেই নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের দূরদূরান্তের স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। যাঁদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, তাঁরা দিনের বেলা এসব পুড়ে যাওয়া বাড়িঘরেই অবস্থান করছেন এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জামাত থেকে তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই মসজিদেও রাত কাটাচ্ছেন।