:: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ::
বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এতে প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছে।
স্থানীয়রা বিনোদপুর বাজারসংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীরের বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছেন। পাল্টা আক্রমণে রাবি শিক্ষার্থীরাও স্থানীয়দের লক্ষ্য করে প্রাচীরের ভেতর থেকে বাইরে ইটপাটকেল ছুড়ছেন।
সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকের পুলিশ বক্সটি পুড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আগুনে পুলিশ বক্সের পাশে কয়েকটি দোকানঘরও পুড়ে যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জলকামান ও টিয়ারশেল ছুড়ছে পুলিশ। শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর।
সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম।
আহত শিক্ষার্থীদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন, আবার অনেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া একজন স্থানীয় আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আহত শিক্ষার্থীদের নাম জানা যায়নি।
জানা গেছে, বগুড়া থেকে ইসলাম ট্রাভেলসের বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়ির ড্রাইভার শরিফুল ও কন্ডাক্টর রিপনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় আকাশের। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট এসে আবারও কন্ডাক্টারের সঙ্গে ঝামেলা বাধে। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং স্থানীয় দোকানদারে ওপর চড়াও হন।
বিষয়টির মীমাংসা করতে ঘটনাস্থলে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া গেলে তার বাইকে আগুন লাগিয়ে দেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের হামলায় আহত রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আল জাবের আহমেদ বলেন, বাসের কন্ডাক্টর ও স্থানীয়দের হামলা থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে রক্ষা করতে ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় তারা আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের শতাধিক ছাত্র আহত হয়েছেন। আমরা সবাই হাসপাতালে এসেছি চিকিৎসা নিতে।
চারুকলা অনুষদের আহত শিক্ষার্থী আকাশ জানান, আমি রাস্তার ওপরে ছিলাম, হঠাৎ স্থানীয়রা আক্রমণ করেন। এলোপাতাড়ি মারতে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাথা, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত নিয়ে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন। গুরুতর আহত ২৫ জন শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আহতের পরিমাণ বেড়েই চলছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছে। র্যাবও এ অভিযানে অংশ নিচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিনোদপুর গেটের সামনে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আগামীকাল রোববার ও সোমবার সব ধরনের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
এ সময় তিনি মাইকে এ ঘোষণা দেন। তবে ঘোষণার পরই তোপের মুখে পড়েন তিনি। ক্যাম্পাস বন্ধের প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্য মাইকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের প্রতি অনুরোধ হলে ফিরে যাও। তোমাদের জন্য প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। রুমে যাও তোমরা। এ ঘটনায় প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ছাত্র ফেডারেশনের নেতা মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, আমরা উপাচার্যের এই সিদ্ধান্ত মানিনা। এটা আন্দোলন দমানোর একটা প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। আরও আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান, দুই দিন ক্লাস পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখান করছি। পরীক্ষা বন্ধ থাকতে পারে, কিন্তু ক্লাস বন্ধ রাখা উচিত না।