:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডের রায়ের কারণে ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা ৫২ বছর বয়সী রাহুল গান্ধীকে দেশটির পার্লামেন্ট থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যা দিয়ে রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ ফেরাতে সবকিছু করার ঘোষণা দিয়েছে কংগ্রেস।দলটির নেতারা গতকালই এই রায়কে আইনি ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবেন বলে জানিয়েছেন। ক্ষমতাসীন বিজেপি যথারীতি রায়কে স্বাগত জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফৌজদারি মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীর দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপরেই তাকে লোকসভার এমপি থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো। লোকসভা সচিবালয়ও তার নির্বাচনী এলাকা শূন্য ঘোষণা করেছে।
লোকসভার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শ্রী রাহুল গান্ধী, কেরালার ওয়েনাদ সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্বকারী লোকসভার সদস্য- তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তারিখ থেকে অর্থাৎ ২৩ মার্চ ২০২৩ থেকে লোকসভার সদস্যপদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে কিছুক্ষণের জন্য লোকসভা হাজির হন রাহুল গান্ধী। এ সময় লোকসভার অধিবেশনে ব্যাপক হট্টগোল হয়। বিক্ষোভ-প্রতিবাদের জেরে দুপুর পর্যন্ত লোকসভার অধিবেশন মুলতবি করা হয়। এরপর চলে যান তিনি।
ভারতের ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ৮ (৪) ধারায় বলা ছিল, নিম্ন আদালতে কোনো সংসদ সদস্য বা বিধায়ককে যদি দু’বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাহলে তাঁর সাংসদ বা বিধায়ক পদ সঙ্গে সঙ্গে খারিজ হবে না। তিনি উচ্চ আদালতে আবেদন জানাতে পারবেন। ৬০ বছর এভাবেই চলছিল। কিন্তু ২০১৩ সালের অক্টোবরে যুগান্তকারী রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি একে পট্টনায়েক ও বিচারপতি এসজে মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ বলে, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ৮ (৪) ধারা অসাংবিধানিক। যে আদালতই কোনো সংসদ সদস্য বা বিধায়কের বিরুদ্ধে দু’বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড দিক সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পদ খারিজ হয়ে যাবে।
এই রায়ের পরেই সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে যায় পশু খাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত সাবেক রেলমন্ত্রী ও আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদবের। সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর মতই বিতর্কিত মন্তব্য কাণ্ডে উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক আজম খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় এলাহাবাদ কোর্ট। সংশোধিত আইন অনুযায়ী তারপরেই বাতিল হয়ে যায় তাঁর সংসদ সদস্য পদ।
এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লোকসভা। ঘটনা জানাজানি হতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ করেছেন হয়েছে কংগ্রেস কর্মীরা। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সরব হয় কংগ্রেস। কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খারগে পরিস্থিতি আঁচ করে আগে থেকেই বাম, আপ, জেডিইউ, ডিএমকেসহ প্রায় ১২টি দলের সঙ্গে শুক্রবার সকালেই বৈঠক সারেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহার নিয়ে ১৪ বিরোধী দল জোটবদ্ধভাবে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করে এদিন।
কর্ণাটকের ওয়েনাদ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রাহুল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যটির কোলারে এক জনসভায় পলাতক ব্যবসায়ী নিরব মোদি ও ললিত মোদির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নামের মিল থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে এ মন্তব্য করেছিলেন। ওই সময় লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণায় তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘চৌকিদার চোর’। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘সব মোদিরা কেন চোর হয়। সব চোরের পদবি কীভাবে ‘মোদি’ হয়।’
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালে এক মামলার রায়ে বলেছিলেন, কোনো মামলায় কোনো সংসদ সদস্য, বিধায়ক বা বিধান পরিষদের সদস্যের দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সদস্যপদ সঙ্গে সঙ্গে খারিজ হয়ে যাবে।
রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ বাতিল অন্যায্য এবং এর মধ্য দিয়ে ভারতের ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’ হয়েছে মন্তব্য করে শুক্রবার পার্লামেন্টে বিক্ষোভ করেছেন বিরোধী এমপিরা।
কংগ্রেসের এমপিরা রাহুলের বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে আলাপ করতে চেয়েছেন। তারা শিগগির তার সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাহুল গান্ধীর কারাদণ্ড ঘোষণার পর থেকে বিরোধী দলের নেতারা সিদ্ধান্তটির সমালোচনা করছেন। আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল বৃহস্পতিবার বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতের ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু গান্ধীকে মানহানি মামলায় দণ্ড দেওয়াটার প্রতিবাদ জানায় আপ। বিজেপি মূলত সব বিরোধী পার্টিকে ধ্বংস করতে চায়। এটা সেই চক্রান্তের অংশ।
ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বলেন, সব দেখেশুনে বুঝতে কষ্ট হয় আমরা কোথায় আছি। আমরা কি স্বাধীন-স্বাভাবিক দেশে আছি, না জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি? দেশ আজ অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেন, রাহুল গান্ধী নয়, বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে দেশ, জনগণ, সামাজিক সংহতি এবং সংবিধান অবমাননার অভিযোগে মানহানি মামলা হওয়া উচিত।