:: নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ::
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্বজনদের সামনেই স্বেচ্ছাসেবক লীগ হাশমত আলীর নেতৃত্বে যুবদল নেতা মাহবুব আলমকে (৩০) হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
এ সময় মাহবুবকে বাঁচাতে তাঁর বাবা-মা-ভাই এবং চাচার অনুনয় বিনয় ও প্রাণভিক্ষার আঁকুতিতে কর্ণপাত করেনি ঘাতকরা।
মঙ্গলবার সকালে আড়াইহাজারের দুপ্তারা ইউনিয়নের সিংরাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মাহাবুব সিংরাটি এলাকার হানিফ মিয়ার ছেলে এবং দুপ্তারা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হাশমত আলী ঘটনার পর থেকে পলাতক। তিনি দুপ্তারা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। এ ছাড়া হাশমত সম্পর্কে মাহবুবের খালাতো বোনের স্বামী হলেও তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ ছিল।
নিহতের চাচা মজিবর রহমান জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা হাশমত আলীর কাছ থেকে মাহবুব একটি জমি বিক্রির বায়না বাবদ ৩ লাখ টাকা নিয়েছিল। কিছুদিন ধরে হাশমত সেই জমি নেবে না জানিয়ে বায়নার টাকা ফেরত চান। কিন্তু সময় মতো মাহবুব টাকা ফেরত দিতে না পারায় হাশমতের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
নিহতের বড়ভাই হাবিবুর রহমান ও মহিবুর রহমান বলেন, মাহবুবের সঙ্গে হাশমত আলীর জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এ নিয়ে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে সালিশও হয়েছে কিন্তু সমাধান হয়নি। হাশমত জমির বদলে তিন লাখ টাকা দাবি করে; কিন্তু আমার ভাই ওই টাকা দিতে রাজি হয়নি। এ নিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় আমার ভাই কালীবাড়ি বাজারে গেলে হাশমতের লোকজন তাঁকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে আহত করে। এক পর্যায়ে তারা অটোরিকশাতে করে আমার ভাইকে হাশমতের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে হাশমত, তাঁর ভাই কিসমত, কামাল, বাবা ইব্রাহীম, চাচাতো ভাই হান্নান, আল আমিনসহ তাদের লোকজন মাহবুবকে হাতুড়ি দিয়ে আরেক দফা পিটিয়ে আহত করে।
মাহবুবের দুলাভাই মোহাম্মদ ইব্রাহীম জানান, অপহরণের খবর পেয়ে মাহবুবের বাবা-মা ও দুই ভাই দ্রুত হাশমতের বাসায় যান। সেখানে তারা দেখে হাশমতের লোকজন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মাহবুবের দুই পা ভেঙে দিয়েছে। এ সময় মাহবুবকে বাঁচাতে তাঁর বাবা-মা-ভাইয়েরা হাশমতের পা ধরে জীবনভিক্ষা চান এবং দাবীকৃত টাকা আজই শোধ করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তবু ঘাতকদের মন গলেনি। উল্টো তারা মাহবুবের ভাই মহিবুরকে পিটিয়ে উলঙ্গ করে বাইরে বের করে দেয়। হাবিবুরকেও মারধর করা হয়। এরপর হাবিবুরের সামনেই মাহবুবকে কোপানো হয় এবং ছুরি দিয়ে উপড়ে ফেলা হয় তাঁর একটি চোখ। মাহবুব নিস্তেজ হয়ে পড়লে ঘাতকরা ঘরের ভেতরে যায়। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় মাহবুবকে উদ্ধার করে প্রথমে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে মাহবুব মারা যান।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক তৈয়ব বলেন, এ ঘটনায় কিসমত ও কামাল, পাবেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে আরও ৫ জনকে। প্রধান অভিযুক্ত হাশমত পলাতক আছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। দু’পক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। লাশ নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে আছে।
যুবদল নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলী ভূঁইয়া বলেন, রাজনৈতিক কারণে যুবদল নেতা মাহবুবকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর বিচার ও খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার চাই।