:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
আগামী ৯ থেকে ১১ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এটি ১১ থেকে ১৫ মে’র মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
১১ মে মধ্যরাতের পর থেকে ১৩ মে’র মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানলে বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ হতে পারে ১৫০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। তবে এটি ভারতের ওড়িশা রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানার শঙ্কাও রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হলে নাম হবে ‘মোচা’। নামটি দিয়েছে ইয়েমেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ৮ থেকে ৯ মে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ১২ অথবা ১৩ তারিখে লঘুচাপটির ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আছে।
আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে এপ্রিল মাসের অবস্থা তুলে ধরে বলা হয়, ওই মাসে ৪ থেকে ১২ তারিখ মৃদু থেকে মাঝারি, ১৩ থেকে ২২ তারিখ মাঝারি থেকে তীব্র এবং ২৪ থেকে ৩০ পর্যন্ত মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এ মাসে ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়।
এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। তবে চলতি মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে এক থেকে তিন দিন বজ্র, শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি থেকে প্রচণ্ড কালবৈশাখী এবং তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী হতে পারে।
আবহাওয়ার মাসব্যাপী পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, এ মাসে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে একটি প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি থাকতে পারে।
কানাডার সাচকাচুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ নাগরিক নিউজকে বলেন, ‘আবহাওয়া পূর্বাভাসের ইউরোপীয়, আমেরিকান, কানাডিয় এবং অন্যান্য মডেল অনুযায়ী মে মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হয়ে স্থলভাগে আঘাত হানবে। ৮ তারিখ লঘুচাপটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে এবং ১০ বা ১১ তারিখে তা স্থলে ভাগে আঘাত হানবে।’
‘আবহাওয়ার পূর্বাভাসের গ্লোবাল মডেল বা আমেরিকান মডেল অনুযায়ী ঝড়টি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ এবং উড়িষ্যার মাঝামাঝি স্থানে স্থলভাগে আঘাত হানবে কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড় আসানি ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে ওপর দিয়ে অল্প কিছু অংশ ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে মূল অংশ ও বাংলাদেশের সাতক্ষীরা উপকূল দিয়ে অল্প কিছু অংশ বন্দরের উপকূল দিয়ে অতি সক্রিয় ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত হানবে ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত যে কোনো সময়। বাতাসের দমকা গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় প্রায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার,’ বলেন মোস্তফা কামাল।
তবে শক্তিশালী এই ঝড়টি কোন জায়গায় স্থলভাগে আঘাত হানবে তা ৫ মে এর পরে সঠিকভাবে বলা যাবে, যোগ করেন এই আবহাওয়া এবং জলবায়ু গবেষক।
চারদিন আগে আবহাওয়া সংস্থা ওয়েদার অব কলকাতার কর্মকর্তা রবীন্দ্র গোয়েঙ্কা বলেন, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া পরিস্থিতি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূল থাকবে। তবে ঝড়টি কবে কোথায় তৈরি হবে তা এত আগে বলা সম্ভব নয়। ঝড়টি তৈরি হলে তখন তার গতিপথ নির্দিষ্ট করে বলা যাবে। আমরা পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছি।
২০২০ সালের মে মাসেও বাংলাদেশের উপকূলীয় কয়েকটি জেলা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে একাধিক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। আয়লা, আমফানের মতো ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।