:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
বঙ্গোপসাগরে আগামী রোববার একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরপর এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ধাপ পেরিয়ে তবেই ঘূর্ণিঝড় হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, আগামী কয়েক দিন রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা দেখা যেতে পারে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নিয়ে দুদিন পর আরও সুস্পষ্টভাবে আভাস দেওয়া যাবে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রোববার নাগাদ লঘুচাপটি সৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান বলেন, এ অঞ্চলে সাধারণত মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা বেশি থাকে। এবারের গাণিতিক মডেল অনুযায়ী এ মাসে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা আছে। এখনও লঘুচাপ তৈরি হয়নি। তা হওয়ার পর নিম্নচাপে রূপ নিয়ে গতি-প্রকৃতি নিয়ে জানানো যাবে। বঙ্গোপসাগরে মে মাসে যেসব সাইক্লোন হয়, তার পথ সাধারণত বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে আসে। লঘুচাপ সৃষ্টির পরও অনেক অনিশ্চয়তা থাকে। সম্ভাব্য ঘুর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে এগোতে পারে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ইউরোপীয় মডেল অনুসারে ১২ মে দুপুর ১২টার পর কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে আবহাওয়ার আমেরিকা মডেল বলছে, ১৩ মে দুপুর ১২টার পর উত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ভোলা জেলার উপকূল দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।
আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য তুলে ধরে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, ৮ থেকে ৯ মের মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। লঘুচাপটি ১০ মের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে ও ১১ মে এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্টের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ঘূর্ণিঝড়টি ১৪ মে মধ্যরাত থেকে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সরাসরি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে স্থলভাগে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ১৪০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের ফলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও রয়েছে। ১৪ মে (চাঁদের ৮১ শতাংশ অন্ধকার থাকবে) সন্ধ্যার পর যদি ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানে তাহলে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের চর এবং উপকূলীয় এলাকায় কমপক্ষে ১০ ফুট পর্যন্ত উঁচু জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি যদি ১৭ বা ১৮ মে আঘাত হানে তাহলে এসব এলাকায় ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা থাকবে।’ তাই উপকূলে সরকারিভাবে দ্রুত বার্তা পৌঁছানো, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা, দ্রুত ধান কাটাসহ নানা প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মোস্তফা কামাল পলাশ।
এদিকে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। ফলে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপমাত্রার পূর্বাভাসে বলা হয়, সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।