:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
তুরস্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৯৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে। এতে প্রেসিডেন্ট পদে কোনো প্রার্থী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। তবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন একে পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট পিপলস অ্যালায়েন্স।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ব্যালট গণনা হয়েছে। এতে রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিকদারোগ্লু পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ।
নির্বাচনের প্রথম ধাপে কোনো প্রার্থীই প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্থাৎ ৫১ শতাংশ ভোট পাবেন না। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন গড়াতে পারে দ্বিতীয় ধাপে। আর সেটা হলে আগামী ২৮ মে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
এদিকে তুরস্কের পার্লামেন্টের ৬০০ এমপি পদের নির্বাচনে ৩২৩টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে এরদোগানের দল একে পার্টির নেতৃত্বাধীন পিপলস অ্যালায়েন্স। এর মধ্যে একে পার্টি এককভাবে পেয়েছে ২৬৯টি আসন। বিপরীতে নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স পেয়েছে ২১৩ আসন।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) নেতৃত্বাধীন পিপলস অ্যালায়েন্সের সঙ্গে থাকা অন্য দলগুলো হলো- ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি (এমএইচপি), নিউ ওয়েলফেয়ার পার্টি (ওয়াইআরপি) এবং গ্রেট ইউনিয়ন পার্টি (বিবিপি)।
অপরদিকে প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতৃত্বাধীন জোট নেশন অ্যালায়েন্সে রয়েছে- আইওয়াইআই পার্টি (গুড পার্টি), ফেলিসিটি পার্টি, দ্য ডেমোক্রেসি অ্যান্ড প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিইভিএ), ফিউচার পার্টি এবং ডেমোক্র্যাট পার্টি (ডিপি)। এর মধ্যে সিএইচপি এককভাবে পেয়েছে ১৬৮ আসন।
আংকারার মেয়র যিনিও এরদোয়ানের প্রধান বিরোধী দল সিএইচপির অংশ। তিনি বলেছেন তুরস্কজুড়ে ২৩ দশমিক ৮৭ শতাংশের ব্যালট বক্সের ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। এতে এগিয়ে আছেন কেমাল কিলিচদারুগলু।
এর আগে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় আনাদোলু এজেন্সি ৪০ শতাংশের ব্যালট বক্সের ফলাফলে এরদোয়ানকে এগিয়ে রাখে। আনাদোলু এজেন্সি ১৭ শতাংশ ভোট গণনার ওপর ভিত্তি করে ফলাফল প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একে পার্টি ৫৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ ভোটে এগিয়ে। অন্যদিকে এরদোয়ানের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারুগলুর সিএইচপি পেয়েছে ৩৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।
এমন ফলাফলের বিরোধীতা করেছেন কেমালও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে তিনি জানান, তিনি এগিয়ে আছেন। তিনি লিখেছেন, আমরা এগিয়ে আছি।
এছাড়া আঙ্কা নামে দেশটির এক প্রাইভেট সংবাদ সংস্থা ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটের ফলাফলে কেমাল এগিয়ে আছেন বলে জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন কেমাল কিলিচদারুগলু। অন্যদিকে এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
দেশটিতে এবার ভোটার সংখ্যা ৬ কোটি ৪১ লাখ। এর মধ্যে ১৭ লাখ ৬০ হাজার ভোটার আগাম ভোট দেন। এছাড়া এবারে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছেন অন্তত ৪৯ লাখ ভোটার।
গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। দেশটিতে এতদিন অনেকটা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন এরদোয়ান। তবে এবারের মতো এর আগে তিনি এতটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েননি।
আধুনিক তুরস্কের ১০০ বছরের ইতিহাসে এটি অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন। দেশটিতে ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন এরদোয়ান। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন কি না, তা আজকের নির্বাচনে নির্ধারিত হবে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রথম দিকে এরদোগান বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও পরবর্তীতে তিনি পিছিয়ে পড়েন।
নির্বাচনে বিভিন্ন বেসরকারি প্রাপ্ত ফলাফলের সূত্রে দেখা যায়, নির্বাচনে কেউই ৫০ ভাগের বেশি ভোট পাবেন না। এতে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদলু এজেন্সির চিফ রিপোর্টার বলেন, তুরস্কের এই নির্বাচনে এখন বিরোধী নেতার জয়লাভের কোন সম্ভাবনা নেই। এখন আসল বিষয়টা হলো এরদোয়ান কি ৫০% এর বেশি ভোট পেয়ে জয়লাভ করবেন নাকি ৫০% এর কম পেয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ১৫ দিন পর আবার নির্বাচনে যেতে বাধ্য হবেন?
তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনও প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে আগামী ২৮ মে শীর্ষ দুই প্রার্থীকে নিয়ে হবে রানঅফ ভোট।
রোববারের ভোটে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে শীর্ষ দুই প্রার্থীকে নিয়ে আগামী ২৮ মে হবে রান-অফ ভোট।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, প্রেসিডেন্টের পদের লড়াইয়ে নামা চার প্রার্থীর মধ্যে মুহররম ইনসে তিন দিন আগে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন; তবে তার আগেই ব্যালট ছাপা শেষ হয়ে যাওয়ায় তার নাম বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
শনিবার প্রচারের শেষ পর্যায়ে কিলিসদারোগলু আধুনিক সেক্যুলার তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
আর ৬৯ বছর বয়সী এরদোয়ান প্রচার শেষ করেন ইস্তাম্বুলের হায়া সোফিয়ায় মাগরিবের নামাজ পড়ে।
তুরস্কের নির্বাচনের দিকে মুসলিম বিশ্ব তাকিয়ে আছে, নামাজ শেষে উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে একে সমাবেশে এ নেতা এমনটা বলেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে।
এ তিনজনের বাইরে ব্যালটে থাকা অন্য নামটি উগ্র-জাতীয়তাবাদী সিনান ওগানের।
তুরস্কে এখন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বেশি হওয়ায় সবার চোখ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে থাকলেও আইন প্রণয়ের গুরুত্ব থাকায় পার্লামেন্ট নির্বাচনও হেলাফেলার নয়।
তুরস্কের সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে পার্লামেন্টে আসন পেতে হলে প্রাপ্ত ভোটের ন্যূনতম ৭ শতাংশ লাগে, যে কারণে বেশিরভাগ দলই জোট করে নির্বাচনে নামে।