:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনটি দাতব্য ট্রাস্টকে দান করা টাকার ওপর ১২ কোটি টাকা কর দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ড. ইউনূসের করা পৃথক ৩টি আবেদন খারিজ করে আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনো প্রকাশ না হওয়ায় এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১১-২০১২ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ড. ইউনূস ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট’, ‘ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট’ ও ‘ইউনূস সেন্টার’ নামে ৩টি ট্রাস্টকে ৭৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা দান করেন।
অনুদানকৃত অর্থের ওপর ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার ‘উপহার কর’ আরোপ করে কর কমিশনার (ডিসিটি)।
অধ্যাপক ইউনূস দানকৃত অর্থের ওপর কর আরোপ চ্যালেঞ্জ করে কর আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন। তবে কর আপিল ট্রাইব্যুনাল ডিসিটির সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। আপিলের আগে তিনি কর অফিসে ৩ কোটি টাকার বেশি জমা দেন।
ড. ইউনূস কর আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ৩টি আয়কর রেফারেন্স দাখিল করেন।
১৯৯০ সালের দানকর আইন অনুযায়ী ২০১১-১২ করবর্ষে মোট ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দানের বিপরীতে প্রায় ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা কর দাবি করে ড. ইউনূসকে নোটিশ পাঠায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০১২-১৩ করবর্ষে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা দানের বিপরীতে ১ কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার টাকা দানকর দাবি করা হয়। আবার ২০১৩-১৪ করবর্ষে ৭ কোটি ৬৫ হাজার টাকা দানের বিপরীতে ১ কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ দেয় এনবিআর।
দানের বিপরীতে কর দাবি করে এনবিআরের ওই তিনটি নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন ড. ইউনূস। ট্যাক্স আপিল ট্রাইব্যুনালে এসব মামলা করা হয়। মামলায় ড. ইউনূসের দাবি, আইন অনুযায়ী দানের বিপরীতে এনবিআর এই কর দাবি করতে পারে না।
এরপর ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর তার আবেদন খারিজ করেন আদালত। এরপর ২০১৫ সালে তিনি হাইকোর্টে তিনটি রিট মামলা করেন। ওই মামলাগুলোর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দানকর দাবির নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে ২০১৫ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট এবং ইউনূস সেন্টার ট্রাস্ট—এই তিন ট্রাস্টে ড. ইউনূস দান করেন। তিনটি ট্রাস্টে তাঁর দান করা অর্থের পরিমাণ ৭৬ কোটি ৭৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। পরে ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস (ডিসিটি) মূল্যায়ন করে ২০১১–১২, ২০১২–১৩ এবং ২০১৩–১৪ করবর্ষের জন্য ওই অর্থের ওপর ‘দানকর’ হিসেবে ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা আরোপ করেন। ‘দানকর’ আরোপের বিরুদ্ধে ড. ইউনূস কমিশনার অব ট্যাক্সেসে আপিল করে বিফল হন। ডিসিটির সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
এরপর কর ট্রাইব্যুনালে আপিল করে বিফল হন ড. ইউনূস। এ অবস্থায় ২০১৫ সালে হাইকোর্টে পৃথক তিনটি আবেদন (রেফারেন্স) করেন তিনি। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল দিয়ে দানকর আদায়ে নোটিশের কার্যক্রম অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য স্থগিত করেন। এরপর রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষ এ–সংক্রান্ত রুল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয়। আবেদনগুলো ১৬ মে কার্যতালিকায় উঠলে সেদিন আদালত শুনানির জন্য ২৩ মে দিন রাখেন। সেদিন আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শেষে আজ রায়ের জন্য দিন রাখেন হাইকোর্ট। আজ সেই রায় ঘোষণা করা হলো।