:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানি সংকট চলছে। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ লাইনে পানি যাচ্ছে না। বিকল্প উপায়ে পানির গাড়ি চেয়েও গ্রাহকেরা পানি পাচ্ছেন না। দীর্ঘ সিরিয়াল থাকায় টাকা দিয়েও পানি কিনতে পারছেন না।
রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে। তীব্র গরমে ঢাকায় পানির চাহিদা বেড়েছে। আর বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে পানির উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার দৈনিক পানির উৎপাদন সক্ষমতা ২৮০ কোটি লিটার। আর নগরবাসীর দৈনিক পানির চাহিদা ২৬৫ কোটি লিটার। স্বাভাবিক সময়ে নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণে তেমন কোন অসুবিধা হয় না। তবে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির চাহিদা বেড়ে গেলে তখন প্রতিবছরই ঢাকা ওয়াসাকে পানি সরবরাহে হিমশিম খেতে দেখা যায়। এবার বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা পূরণ করতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। একদিকে তীব্র গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৩৫ কোটি লিটার। অন্যদিকে পানির উৎপাদন কমেছে প্রায় ৮০ কোটি লিটার। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানির ঘাটতি প্রায় ১১২ কোটি লিটার। এই অবস্থায় কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্যক্রম।
ঢাকা ওয়াসার উত্তোলনকৃত পানির ৬৫ ভাগ উৎপাদন করে ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে। অর্থাৎ, ১ হাজার ৩৫টি পাম্পের মাধ্যমে এসব পানি উত্তোলন করে থাকে। বিদ্যুৎ চলে গেলে ৪০০টি পাম্প জেনারেটরের মাধ্যমে পাম্প চালু থাকে। লোডশেডিংয়ের পর জেনারেটর চালু করেও চাহিদা অনুযায়ী পানির উৎপাদন করতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। অন্যদিকে সায়েদাবাদ, পদ্মা-হলদিয়া, চাঁদনীঘাট প্ল্যান্ট বা ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে ৩৫ ভাগ পানি উৎপাদন করছে। এসব প্ল্যান্ট নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে তা শোধন করে নগরবাসীকে সরবরাহ করছে।
ঢাকা ওয়াসা ১০টি জোনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে থাকে। প্রতিদিন এসব জোনের স্থাপিত পাম্পগুলোয় দেড় শ বারেরও বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই পানি সংকট থাকছে, কুড়িল জোয়ার সাহারা, আফতাবনগর, বনশ্রী, মিরপুর-১১ এর বি-ব্লক, ভাষানটেক, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, উত্তরার সেক্টর-৭, ১১ ও ১২, জুরাইন, মাতুয়াইল, রহমতপুর, কোনাপাড়া, ডগাইর, কদমতলী, নন্দীপাড়া, মহাখালী-জ ব্লক, মোহাম্মদপুরের চাঁন মিয়া হাউজিং, আদাবর, শ্যামলী, পূর্ব রাজাবাজার ও ক্রিসেন্ট রোড, মানিকনগর, মধ্য বাসাবো, কেবি রোড, দয়াগঞ্জ, কাজলারপাড়, পশ্চিম কাটাসুর ঢাকা রিয়েল এস্টেট হাউজিংসহ মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানি সংকট চলছে।
ঢাকা ওয়াসার ১০টি অঞ্চল অফিসে দৈনিক দেড় হাজারের বেশি পানির গাড়ির চাহিদা জমা পড়ছে। ঢাকা ওয়াসা চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক পানিও সরবরাহ করতে পারছে না। টাকা দিয়ে পানি কিনতেও এটা রীতিমতো লবিং করতে হচ্ছে। যাদের ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে; তাদের পানি পেতে কিছুটা সহজ হচ্ছে। এর বাইরে সাধারণ নগরবাসীকে তীব্র লোডশেডিং, তীব্র তাপদাহের সঙ্গে তীব্র পানি সংকট স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।
ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহের ব্যবস্থাটি ১০টি জোন বা অঞ্চলে বিভক্ত। অঞ্চলগুলো থেকে গত সোমবারের সংগ্রহ করা তথ্যে দেখা গেছে, পাঁচটি অঞ্চলে (১, ২, ৩, ৫ ও ১০) বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কারণে বেশি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এসব অঞ্চলের পাম্পগুলো গত সোমবার মোট ১৫৮ বার বিদ্যুতের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগের দিন এসব অঞ্চলের পাম্প ১৪৯ বার বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের শিকার হয়।
ঢাকা ওয়াসার লাইনে পানি না পাওয়া গেলে একমাত্র বিকল্প সংস্থাটির কাছ থেকে পানি কেনা, যা গাড়ির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। দুই, সাড়ে তিন, পাঁচ ও ছয় হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার গাড়ি রয়েছে। দাম ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সংস্থাটির ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে ১ হাজার ৫৪৮ গাড়ি পানির চাহিদা এসেছে। কিন্তু এর বিপরীতে ৭৩২ গাড়ি পানি সরবরাহ করতে পেরেছে সংস্থাটি।
ঢাকা ওয়াসা ১৩ বছরে অন্তত ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে। সংস্থাটি বিপুল অর্থব্যয়ে বড় বড় প্রকল্প নিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, জেনারেটরের অভাবে লোডশেডিংয়ের সময় তারা পাম্প চালাতে পারছে না।