:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
ভারতীয় নারী দলকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এশিয়া কাপ জিতলেও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয়ের কোনো নজির ছিল না বাংলাদেশের। ভারতকে ৪০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশের মেয়েরা।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে রোববার তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও ভারত।
বৃষ্টির বাধায় ম্যাচ নেমে আসে ৪৪ ওভারে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৩ ওভারে ১৫২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ৩৫.৫ ওভারে ১১৩ রানে গুটিয়ে যায় ভারত।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বেশ ধীরগতির শুরু করেন উদ্বোধনী ব্যাটার শারমিন আক্তার সুপ্তা। অন্যপ্রান্ত মুর্শিদা খাতুন রান করলেও কিছুতেই রানের খোঁজ পাচ্ছিলেন না সুপ্তা। ১৮ বল খেলে কোনো রান করার আগেই আউট হন তিনি। রান আউট হয়ে মুর্শিদা খাতুনের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি।
পরের ওভারেই সাজঘরে ফেরত যান মুর্শিদা। আমানজতের বলে হারমানপ্রিত কৌরের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর বৃষ্টি নেমে আসে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ১০৭ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হয়। ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসে ৪৪ ওভারে।
এর মধ্যে ফারজানা হকের সঙ্গে ভালো জুটি গড়েছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। ৫ চারে ৪৫ বলে ২৭ রান করে আউট হন ফারজানা। তিনি আমানজতের দ্বিতীয় শিকার হলে ভাঙে ৪৯ রানের জুটিটি।
পরের লড়াইটা জ্যোতির। তিনিও অবশ্য খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। ৩ চারে ৬৪ বলে ৩৯ রান করে জ্যোতি ফেরেন সাজঘরে। আমানজতের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি। শেষদিকে নেমে ২০ বল খেলে ১৬ রান করেন সুলতানা খাতুন। এছাড়া ২৯ বলে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন ফাহিমা খাতুন। অসুস্থ থাকায় ব্যাটিংয়ে নামেননি স্বর্ণা আক্তার।
এরপর জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই ছন্দ খুঁজে পায়নি ভারত। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে প্রথম উইকেট হারায় তারা। মারুফার ওভারে ১২ বল খেলে ১১ রান করা স্মৃতি মান্ধানার দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন জ্যোতি। আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার প্রিয়া পুনিয়াকেও আউট করেন মারুফা। ২৭ বল খেলে ১০ রান করেন পুনিয়া।
মারুফার বিধ্বংসী বোলিংয়ে সৃষ্টি করা সেই শুরুর চাপ পরেও ধরে রাখে বাংলাদেশ। ৫ বলে ৫ রান করা ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌরকে এলবিডব্লিউ আউট করেন নাহিদা আক্তার। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়ে মাঠে ছাড়েন হারমানপ্রিত। ভারতের চাপ আরও বাড়ে রাবেয়া খানের দারুণ এক বলে ইয়াস্তিকা ভাটিয়া বোল্ড হলে। ২৪ বল খেলে ১৫ রান করেন তিনি।
মাঝে দলকে কিছুটা ভরসা জোগানোর চেষ্টা করেন জেমাইমা রদ্রিগেজ। কিন্তু এই ব্যাটারও নিজের ইনিংসকে লম্বা করতে পারেননি। ২৬ বলে ১০ রান করে লেগ স্পিনার রাবেয়ার বলে মুর্শিদা খাতুনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৬১ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলা ভারতকে কক্ষপথে ফেরানোর চেষ্টা করেন দীপ্তি শর্মা ও আমানজত কৌর।
তাদের ৭১ বলের জুটি বেশ ভারতকে ধীরে ধীরে নিয়ে যাচ্ছিল জয়ের দিকে। কিন্তু আবারও বাংলাদেশের জন্য ত্রাণকর্তা হন মারুফা আক্তার। ২৯তম ওভারে তাকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন অধিনায়ক জ্যোতি। চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হজমের পরের বলেই উইকেট এনে দেন মারুফা। উইকেটের পেছনে জ্যোতি ক্যাচ নিলে আউট হন ৪০ বলে ১৫ রান করা আমানজত। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না ভারতীয় ব্যাটার, আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায় তাকে।
পরের বলে মারুফা নেন আরও এক উইকেট। স্নেহা রানাকে দুর্দান্ত এক ইন সুইংয়ে বোল্ড করেন এই মিডিয়াম পেসার। টানা তিন বলে তিন উইকেট পায় বাংলাদেশ। শেষটি অবশ্য রাবেয়ার এনে দেওয়া। সেট ব্যাটার দীপ্তি শার্মাকে আউট করেন তিনি। ৪০ বলে কোনো বাউন্ডারি না হাঁকিয়ে ২০ রান করা ব্যাটার ক্যাচ দেন রিতু মনির হাতে।
এরপর আর অলআউট হতে খুব বেশি সময় নেয়নি ভারত। বারেদি আনুশা শেষ ব্যাটার হিসেবে রান আউট হলে নিশ্চিত হয় সেটি। তৃতীয় আম্পায়ারের থেকে আউট নিশ্চিত হতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ ৪৩ ওভারে ১৫২/৯ ( মুর্শিদা ১৩, শারমিন ০, ফারজানা ২৭, জ্যোতি ৩৯, রিতু ৮, রাবেয়া ১০, নাহিদা ২, ফাহিমা ১২*, সুলতানা ১৬, মারুফা ৬; পূজা ৯-০-৩৭-০, দীপ্তি ৯-৩-২৬-১, আমানজত ৯-২-৩১-৪, স্নেহ ৮-৩-১১-০, আনুশা ১-০-১১-০, দেবিকা ৭-০-৩৬-২)
ভারত ৩৫.৫ ওভারে ১১৩/১০ (প্রিয়া ১০, স্মৃতি ১১, স্বস্তিকা ১৫, হারমানপ্রীত ৫, জেমিমাহ ১০, দীপ্তি ২০, আমানজত ১৫, স্নেহ ০, দেবিকা ১০*, পূজা ৭, আনুশা ২; মারুফা ৭-০-২৯-৪, নাহিদা ৭-০-১৬-১, সুলতানা ৮-১-২০-১, রিতু ১-০-৪-০, রাবেয়া ৭.৫-০-৩০-৩, ফাহিমা ৫-১-১৪-০)
ফল : বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ ৪০ রানে জয়ী।