কক্সবাজারে হোটেল থেকে আ’লীগ নেতার লাশ উদ্ধার

:: কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে পৌর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাইফ উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হাত বাঁধা অবস্থায় পাওয়া মরদেহটির শরীরে ছুরির তিনটি আঘাত এবং শরীরের নানা অংশে জখম রয়েছে।

সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরের হলিডের মোড় সংলগ্ন আবাসিক হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষে মিলেছে এই মরদেহ। নিহত সাইফ উদ্দিন কক্সবাজার শহরের ঘোনার পাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার আবুল বশরের ছেলে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, হোটেল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধারের জন্য হোটেলে এসেছেন। হাত বাঁধা ছুরিকাঘাত সহ নানাভাবে জখম করে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করা হয়েছে। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সহ নানা উৎস থেকে হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে।

প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার রেজাউল করিম জানান, বোরবার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে নিহত সহ ৩ জন এসে ২০৮ নম্বর কক্ষে উঠেন। সোমবার সকালে তার সন্ধানে আসেন তার বন্ধুরা। বন্ধুদের সাথে নিয়ে কক্ষটিতে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিলে খোলে যায়। খাটে রক্তাক্ত মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। নিহতরা প্রায়শ হোটেলে এসে রুম নিয়ে থাকতেন।

হোটেল সূত্র জানায়, বোরবার বিকেল ৫টায় সাইফ উদ্দিন ও সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক যুবক হোটেলের ২০৮ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেয়। এরপর রাতেই হোটেল থেকে সাইফ উদ্দিনের মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যান ওই যুবক।

সোমবার সকালে নিহত আওয়ামী লীগ নেতার আরেক বন্ধু বৈরাম মোহাম্মদ ইলিয়াছ তাকে হোটেলে খুঁজতে আসেন। তখন হোটেল কর্তৃপক্ষ রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।

হোটেল ম্যানেজার রেজাউল বলেন, নিহত সাইফ উদ্দিন ও তার বন্ধুরা প্রায়ই এ হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিতেন। এ কারণে সাইফ উদ্দিন হোটেলের সকলের পরিচিত। রবিবার যখন তিনিসহ আরেকজন মাস্ক পরিহিত যুবক কক্ষ ভাড়া নিতে আসেন তখন আমরা শুধু সাইফ উদ্দিনের নামই খাতায় নথিভুক্ত করি।

শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল কর জানান, ছাত্রলীগ থেকে শহর আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন সাইফ উদ্দিন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বাবার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। সাইফ উদ্দিনকে পরিকল্পিতভাবে হোটেলকক্ষে হত্যা করে পালিয়েছেন অপরাধীরা। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, সাইফ উদ্দিনের নিজের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে হাত দুই টি বাঁধা রয়েছে। হাটু, পেট এবং পেটের পেছনে ৩ টি ছুরিকাঘাত রয়েছে। রয়েছে আঘাতের নানা চিহ্নও। ইতিমধ্যে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সাথে থাকাদের শনাক্ত করতে কাজ করতে পুলিশ। তিনি হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। তিনি জানান, কক্সবাজার শহর পর্যটন শহর। এই শহর এখন অনেক বেশি অনিরাপদ হয়ে গেছে। নিরাপদ শহর করতে তিনি পুলিশের প্রতি আহবান জানান।

নিহতের আরেক বন্ধু কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ আলী ছোটন বলেন, সাইফের মৃতদেহ উদ্ধারের পর আমরা হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখি। সেই ফুটেজে সাইফের সঙ্গে যাকে দেখা গেছে তার নাম কায়সার হামিদ নয়ন। তিনি নিহতের দূর সম্পর্কের শ্যালক হন।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধারের পর নয়ন ফেসবুকে হত্যাকারীর বিচার চেয়ে পোস্ট করলেও তাকে আমরা কয়েক দফা কল করে ঘটনাস্থলে ডেকেছিলাম। কিন্তু তিনি আসেননি। পরে শুনেছি পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়েছে।

নিহতের ছোট ভাই মহিউদ্দিন বলেন, আমার বড় ভাইয়ের মৃতদেহ বিছানায় পড়ে থাকলেও তার সঙ্গে হোটেলে ওঠা নয়নের কোনো খবর নেই। এ ছাড়া আমার ভাইয়ের মোবাইল, মোটরসাইকেলের সন্ধান পাইনি এখনো।

নিহতের ভাই মহিউদ্দিন বলেন, ‘রাতে বড় ভাই বাড়িতে যাননি। ফোনও বন্ধ ছিল। ভাবি (নিহতের বউ) ভাইয়ের বন্ধুদের ফোন করে খবর নিতে থাকে। ভাইয়ের বন্ধু ইলিয়াস ভাইয়ের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে খবর নিতে নিতে সানমুনে এসে কক্ষে মরদেহটি পান।

এদিকে, সাইফ উদ্দিনের খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে কক্সবাজারে মিছিল করছে সাবেক ছাত্রনেতাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *