:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৩ মাসে আরও ৩ হাজার ৩৬২টি ব্যাংক হিসাবের আমানত ১ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২ জন। জুন মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪ জন।
এক বছর আগে ২০২২ সালের জুনে কোটি টাকার হিসাব ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭টি। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ৫ হাজার ৯৭টি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৯২। যেখানে জমা ছিল ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৪ কোটি টাকা।
এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি আমানত আছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ৭ লাখ ৩১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
মার্চের তুলনায় জুনে ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যাই শুধু বাড়েনি। তাদের হিসাবে জমা আমানতের পরিমাণও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। জুন শেষে কোটিপতিদের হিসাবে মোট আমানত বেড়েছে সাড়ে ৪৪ শতাংশ।
কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তি নয়। কারণ, ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। অন্যদিকে একজনের একাধিক কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবও রয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থারও কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকগুলোয় জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। মোট ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৯২টি হিসাবে এ আমানত জমা হয়েছে। এর মধ্যে কোটিপতিদের যে আমানত রয়েছে, তা মোট ব্যাংকিং খাতের আমানতের ৪৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জুন শেষে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি।
তিন মাস আগে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫৬টি। যেখানে জমা ছিল ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২টি। কোটি টাকার ওপর এসব হিসাবে জমা আছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর গত বছরের ডিসেম্বরে আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬৪টি। যেখানে জমা ছিল ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ১০ কোটি টাকা।
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। আর কোটি টাকার ওপরে ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬টি হিসাবে জমার পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাব ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। হিসাবগুলোতে জমার পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি ক্যাটাগরিতে কোটি টাকার আমানতকারীদের হিসাব করেছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৭৭২টি। যেখানে জমার পরিমাণ ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। ৫ কোটি থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ২৪৫টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৬ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। আর ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ৪ হাজার ৮১টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৮৬৫টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ২৭৬টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯০৯টি আমানতকারীর হিসাব। এ ছাড়া ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০৭টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৫৩টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭২২টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা ১ হাজার ৮২৪টি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতিদের হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালে ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে কোটিপতি হিসাব দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি।