:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
ফিলিস্তিনের গাজায় আল–আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলের বোমা হামলায় ৫০০ জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মধ্য গাজার আল–আহলি আরব হাসপাতালে হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি হামলায় আহত শত শত রোগী ও গৃহহীন অসংখ্য বাসিন্দা নিরাপদ ভেবে ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে বোমা হামলায় অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন অনেকে। হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিস্ফোরণের পর হাসপাতালের বহুতল ভবনটি জ্বলছে। চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে মরদেহ। ধ্বংসস্তূপ থেকে ভেসে আসছে আহত ব্যক্তিদের আর্তচিৎকার।
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে (বাংলাদেশ সময় সাড়ে রাত ১১টা) হাসপাতালে একাধিক বিস্ফোরণ হয়। জাতিসংঘসহ মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলো হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানও এ হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন।
হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন এক হামলা চালায়। এর পর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় ভয়াবহ এক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা
গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। একে ‘গণহত্যা’ অভিহিত করে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে কেউ চুপ থাকতে পারে না। এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা ‘মানবতার জন্য লজ্জাজনক’।
হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় শত শত মানুষের মৃত্যুকে ‘জঘন্য অপরাধ’ অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলি বাহিনীর হাসপাতালে বোমা হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রলায় বলেছে, ইসরায়েল যেভাবে গাজার হাসপাতাল, স্কুল ও জনবহুল এলাকায় হামলা করছে, এতে সংঘাত ভয়ংকরভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েল যে ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধেরও তোয়াক্কা করছে না, গাজায় হাসপাতালে হামলা তার সর্বশেষ উদাহরণ। গাজায় ‘নজিরবিহীন নৃশংসতা’ বন্ধে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গাজার আল–আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিসরও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এভাবে নির্বিচার হামলা ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন’।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল–সিসি বিবৃতি দিয়ে হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েলের এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরানও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে গাজার নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষদের হত্যা করছে। জঘন্য এ অপরাধের মাধ্যমে ইহুদি রাষ্ট্রটি আরও একবার বিশ্বের সামনে তাদের অমানবিক ও পাশবিকাতেই তুলে ধরেছে।’
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ও এ হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস, জঘন্য, রক্তক্ষয়ী গণহত্যাগুলোর একটি’ অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গাজার হাসপাতালের হামলার নিন্দা জানিয়েছে আরব লীগও। সংস্থাটির প্রধান আহমেদ ঘেতি বলেছেন, বিশ্ব নেতাদের অবিলম্বে এ ‘ট্রাজেডি’ বন্ধ করতে হবে।
এদিকে গাজার হাসপাতালে হামলার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে একটি জরুরি বৈঠকে বসার জন্য অনুরোধ করেছে স্থানীয় সদস্য রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এমন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ফিলিস্তিনের মানবাধিকার সংস্থা আল–মিজান। সংস্থাটি বলছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, হাসপাতালগুলো ‘নিরাপদ স্থান’ হিসেবেই বিবেচিত।
গাজার হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস। অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানানো উচিত। যুদ্ধের কিছু নিয়মনীতি আছে। কোনো হাসপাতালে এভাবে হামলা করার ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
গাজার হাসপাতালে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্সও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবাধিকবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
হাসপাতালে ইসরায়েলের এমন নির্বিচার বোমা বর্ষণকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস। হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রও দায়ী। ইসরায়েলকে আগ্রাসন চালানোর সুযোগ দিয়েছে ওয়াশিংটন।
ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ‘শত্রুরা (ইসরায়েল ও দেশটির মিত্ররা) যে কতটা পাশবিক, হাসপাতালে চালানো এ গণহত্যা তারই প্রমাণ।’ ইসরায়েলের দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়তে সব ফিলিস্তিনিকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন হামাসপ্রধান।
এদিকে হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবুজসংকেত’ পাওয়া ছাড়া ইসরায়েলের পক্ষে এ হামলা চালানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘সবারই বোঝার কথা, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন গতকাল ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টার বেশি বৈঠক করেন। এদিকে জো বাইডেনও আজ ইসরায়েল সফরে আসছেন।’
ইসরায়েলের বোমা হামলার শব্দে ঘুম ভাঙে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের
ইসরায়েলের বোমা হামলার শব্দে ঘুম ভাঙে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা খুলুদ খালেদের। সময়টা এক সপ্তাহ আগের। সেই সময় ছেলের সঙ্গে ঘুমাচ্ছিলেন তিনি। বোমা হামলায় তাঁদের ঘরটি কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। এতে দম বন্ধ হয়ে আসে তাঁর। অত্যন্ত খারাপ লাগতে শুরু করে। তাঁর মনে হয়, আগেই উঠে যাচ্ছে প্রসববেদনা। এতে অনাগত সন্তানের জন্য আতঙ্ক তৈরি হয় তাঁর মনে।
২৮ বছর বয়সী খুলুদ খালেদের বাড়ি গাজার উত্তরাঞ্চলের আল-কারামা জেলায়। সেদিনের সেই দমবন্ধ পরিস্থিতিতেই তিনি এলাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সিএএনকে এই নারী বলেন, এলাকা ছাড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়ার পর তাঁরা শুধু ভবন গুঁড়িয়ে যেতেই দেখেন। তখন তাঁদের মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে মরে যেতে পারেন তাঁরাও। ইসরায়েলি বিমান হামলায় সামান্য কয়েক মিটার দূরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের মরতে দেখেছেন তিনি। ঘটনার ভয়াবহতা তখনো ছিল তাঁর চোখেমুখে। বোমা হামলায় ফিলিস্তিনিদের নিহত হতে দেখে ছেলেকে শক্ত করে জাপটে ধরে রেখেছিলেন তিনি, যাতে মরলেও একসঙ্গে মরতে পারেন তাঁরা।
খুলুদ খালেদ অবশেষে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে এসে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। সেখানে কোনোমতে প্রাণে বেঁচে আছেন বলে জানালেন তিনি। আরও জানালেন, মৃত্যুভয় তাঁদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বেঁচে আছেন সামান্য এক টুকরো শুকনো পাউরুটি খেয়ে। বললেন, ‘আগামীকাল পাউরুটি পাব কি না, জানি না।’
গাজায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের জেরে গুরুতর খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেগুলোরও ভীষণ সংকট দেখা দিয়েছে। মানবেতর দিন কাটাচ্ছে গাজাবাসী।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) তথ্য অনুযায়ী, গাজায় অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নারী আগামী মাসে সন্তান জন্ম দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন চলমান যুদ্ধ শিগগির থেমে যাচ্ছে এমনটা মনে হচ্ছে না। সম্প্রতি ইসরায়েল স্থল অভিযানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে বাসিন্দাদের উপত্যকাটির দক্ষিণাঞ্চলে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। এতে উত্তরাঞ্চলের ১১ লাখ বাসিন্দারা প্রায় অর্ধেক এলাকা ছেড়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলেও বোমা হামলা থেমে নেই। গোটা গাজা উপত্যকাই এখন যুদ্ধক্ষেত্র। কাজেই এই যুদ্ধক্ষেত্রেই অনাগত সন্তানদের আসার আশঙ্কা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে অন্তঃসত্ত্বা এসব নারীকে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ফিলিস্তিনবিষয়ক প্রতিনিধি ডোমিনিক অ্যালেন বলেন, ইসরায়েল ১১ দিন ধরে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। ভয়ংকর এই হামলা যে কারও জন্যই দুঃস্বপ্নের মতো। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা এই নারীরা অনাগত সন্তানের জন্য দিন কাটাচ্ছেন ‘দ্বিগুণ আতঙ্কে’।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হামলার দায় অস্বীকার
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, গাজার ওই হাসপাতালে তারা হামলা চালায়নি। ফিলিস্তিনের সশস্ত্রগোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের নিক্ষেপ করা রকেটই ওই হাসপাতালে আঘাত করে। ইসরায়েলের আরও দাবি, ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলকে নিশানা করে রকেট ছুড়লেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সেগুলো ওই হাসপাতালে আঘাত হানে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, গাজার ‘সন্ত্রাসীদের ছোড়া রকেটই’ নিশানায় গিয়ে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে ওই হাসপাতালে আঘাত হেনেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়ে শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যার ঘটনায় তিনি ‘হতভম্ব’। এ হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ইউএন নিউজে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) দেওয়া পোস্টে আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনে সব হাসপাতাল ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে গাজা সিটির আল-আহলি আল-আরবি হাসপাতালে বিমান হামলা হয়। এ ঘটনায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগঠন হামাস ও ইসরায়েল একে অপরকে দোষারোপ করছে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এ বিমান হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামাসের ছোড়া রকেটই ওই হাসপাতালের ওপর পড়েছে।
এক্সে দেওয়া পোস্টে গুতেরেস লিখেছেন, আন্তর্জাতিক আইনে সব হাসপাতাল ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।
এর আগে গতকাল জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তাবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত একটি স্কুলে হামলার ঘটনায়ও নিন্দা জানিয়েছেন গুতেরেস। তাঁর মুখপাত্র এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান ভল্কার তুর্ক হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুরোপুরি জানতে পারিনি। তবে এটা পরিষ্কার যে অবিলম্বে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।’
স্থল অভিযান শুরু করার হুমকি দিয়ে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এমন অবস্থায় গৃহহীন বেসামরিক নাগরিকদের অনেকে হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান ভল্কার তুর্ক যেকোনো উপায়ে হোক হাসপাতালগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনায় দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে হাজার হাজার রকেট ছোড়ে হামাস। একই সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে হামলা চালান হামাসের যোদ্ধারা। এ সময় তাঁরা বিদেশি নাগরিকসহ অনেক ইসরায়েলিকে আটক করে গাজায় নিয়ে যান। জবাবে ৭ অক্টোবর থেকেই পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে তারা গাজায় টানা বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। অবরুদ্ধ গাজায় দেখা দিয়েছে চরম মানবিক সংকট।
ইসরায়েলকে চাপ দিতে জো বাইডেনকে ১৭৮ আইনবিশেষজ্ঞের আহ্বান
হামলা বন্ধ ও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ইসরায়েলকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির ১৭৮ আইনবিশেষজ্ঞ। তাঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক রয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন আজ বুধবার ইসরায়েল সফরে যাওয়ার কথা। তাঁর এ সফরের আগমুহূর্তে আইনবিশেষজ্ঞরা তাঁকে ওই চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে আইনবিশেষজ্ঞরা বাইডেনকে ‘সরাসরি হস্তক্ষেপ’ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার রাতে মধ্য গাজার আল-আহলি আরব নামের একটি হাসপাতালে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলায় প্রাণ গেছে অন্তত ৫০০ জনের।
মার্কিন আইনবিশেষজ্ঞদের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গাজায় ইসরায়েলি সরকারের ক্রমবর্ধমান প্রতিক্রিয়ার নিন্দা জানাই আমরা। আমাদের মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আপাত সমর্থনে গাজায় নিরস্ত্র পরিবার ও শিশুদের হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে।’
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা নৃশংসতায় গাজা উপত্যকায় তিন হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৪০ শিশু ও ১ হাজার ৩২ নারী রয়েছেন।
আইনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যা শুধু সরাসরি সামরিক হামলার ফলাফল নয়, বরং ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে গাজাবাসীকে দিনের পর দিন ধরে মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত রাখারও ফল।