:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
ঘূর্ণিঝড় হামুন ঝড়ের কবলে পড়ে কক্সবাজারে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়ি-ঘর। এটি দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপের আকারে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া হয়ে মিয়ানমারের দিকে চলে গেছে।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে দেওয়াল চাপা পড়ে ১ জন নিহত হয়েছেন স্থানীয়ভাবে আরও দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তার মধ্যে চকরিয়ার বদরখালীতে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে গাছ পড়ে আজগর আলী (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আর কক্সবাজার শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে আবদুল খালেক নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু।
তবে আজগর আলী ও আবদুল খালেকের মৃত্যুর বিষয়টি জেলা প্রশাসক নিশ্চিত করতে পারেননি।
এছাড়া ঝড়ে পূর্ব বড় ভেওলা ও বিএমচর এলাকায় তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহম্মদ শাহীন ইমরান একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে বাতাসের তোড়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে গাছ ভেঙে পড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
রাত পৌনে আটটার দিকে বাংলাবাজার ও খরুলিয়া এলাকায় সড়কের ওপর বড় বড় দুটি গাছ ভেঙে পড়লে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুই দিক থেকে আসা শত শত দূরপাল্লার বাস কয়েক ঘণ্টা ধরে আটকা পড়ে। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রী ও পর্যটকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে পুনরায় যান চলাচল শুরু হয়।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে পর পর তীব্র বেগে বাতাস শুরু হয়। বাতাসের তাণ্ডব চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। এতে ওই এলাকার কয়েকশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মেরিন ড্রাইভ সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত শত শত গাছ ভেঙে সড়কের ওপর পড়েছে।
এবারের বাতাস যে গতি তা গত ১০ বছরেও আমরা দেখিনি হয়নি। গত বছর ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হেনেছিল তখন জলোচ্ছ্বাস হলেও বাতাসের তীব্রতা এবারের মতো ছিল না।
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। বিশেষ করে উপকূলীয় উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়ায় ক্ষয়ক্ষতির বেশি আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
ইতোমধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রাথমিকভাবে নয়টি উপজেলার জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং ১৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল পতাকা উঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যটকদের সৈকতে না নামতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের সতর্ক করতে বিচকর্মীরা সেখানে মাইকিং করছেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান, কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলায় ক্যাম্পের ভেতরে সিআইসি কার্যালয়, পাকা স্থাপনাগুলো প্রস্তুত রাখা হয়। যেন পরিস্থিতি খারাপ হলেই চলে আসতে পারে।
তবে রোহিঙ্গা শিবিরে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানান রোহিঙ্গা নেতারা।
ঘূর্ণিঝড় হামুন নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ ১৫ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় হামুন উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার দিনগত রাত ১টায় উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে এবং দুর্বল হয়ে সাতকানিয়া, চট্টগ্রামে স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগের অভ্যন্তরে আরও অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।’
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলের নৌযান এবং মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলের নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সামান্য কমতে পারে রাতের তাপমাত্রা।