:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
একদিন বিরতি দিয়ে ফের ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বুধবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
২৮ অক্টোবরের বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা ও পণ্ড করা, আট হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অবরোধের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
এই পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি এবার ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি পালন করছে না।
সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী জানান, দলীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ, নেতা-কর্মীদের অব্যাহতভাবে গ্রেফতারসহ উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। প্রতিবছর এই দিবসে দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে আলোচনাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে রিজভী নেতা-কর্মী ও দেশবাসীকে সর্বাত্মকভাবে তা পালন করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি এত গ্রেফতার, হামলার মধ্যেও সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি সফল করায় দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
রিজভী অভিযোগ করেন, বাড়িতে বাড়িতে গ্রেফতার অভিযান চলছে। এখন নারী নেতাকর্মীরাও গ্রেফতার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। নারীদেরকে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা গ্রেফতার করছেন, যা কোনো আইনে নেই। র্যাবকে আবারও বিরোধী দল দমনে নামানো হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, ক্ষমতাসীনরা বাসে আগুন দিয়ে দায় চাপায় বিরোধীদের। বাসে আগুন দিয়ে ধরা পড়ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, যা ইতোমধ্যে প্রমানিত। অথচ তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছেনা। মিডিয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত সরকারের কব্জায়। তাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অগ্নিসন্ত্রাস করলেও মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা করছে। এটি একটি সরকারের মাস্টারপ্লানেরও অংশ। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন জনগণ এবার আর একদলীয় নির্বাচন করতে দেবে না।
পতনের আগে শেষ তাণ্ডব শুরু করেছে সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের ভাষা বুঝলে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। কোনভাবেই এই গণজোয়ার ঠেকানো যাবে না। আন্দোলন সফল হবেই, জনগণের বিজয় হবেই।
গ্রেফতারের তথ্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ২৭৫’র বেশি নেতাকর্মীকে। মামলা হয়েছে ১০টি, আসামী ৯৯৫ জনের অধিক নেতাকর্মী।
‘দেশের পরিস্থিতি একাত্তরের চেয়েও দুর্বিষহ’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ এখন ‘৭১ সালের দুর্বিষহ দিনগুলোর চেয়েও চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে।
রোববার রাতে মিরপুর থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, জনগণ ‘৭১ সালে দেশের মানুষ যেমন হানাদার বাহিনীর ভয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পালিয়ে বেড়াত, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীকাল পরও তেমনিভাবে এ দেশের মানুষ এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, পুলিশ দিনে-রাতে যে কোনো সময় নেতাকর্মীদের ধরতে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। টার্গেট করা ব্যক্তিকে বাসায় না পেয়ে তাদের বাবা, ভাই কিংবা অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। আটক নেতাকর্মী কিংবা তাদের আত্মীয় স্বজনদের থানায় নিয়ে গিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হচ্ছে। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে দেশে শুরু হয়েছে মহাতাণ্ডব।
রিজভী আরও বলেন, তবে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নই রয়ে যাবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমান অবৈধ শাসক গোষ্ঠীর পতন ঘটাতে বিএনপি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচিতে ভয় পেয়েই ফ্যাসিস্ট সরকার দুদুকে গ্রেফতার করেছে। অবিলম্বে শামসুজ্জামান দুদুর নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানান রিজভী।
এলডিপির সর্বাত্মক অবরোধ ৮-৯ নভেম্বর
আগামী ৮ ও ৯ নভেম্বর (বুধ-বৃহস্পতিবার) দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)।
আজ সোমবার এক বিবৃতিতে এলডিপি প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর বিক্রম) এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোও এই দুই দিন অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিবৃতিতে কর্নেল অলি বলেন, ‘এলডিপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলনরত দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী ৮ ও ৯ নভেম্বর (বুধ ও বৃহস্পতিবার) অবরোধ কর্মসূচি সফল করুন।’
তিনি বলেন, ‘৫ ও ৬ নভেম্বর দেশব্যাপী আন্তরিকতার সঙ্গে অবরোধ সফলভাবে পালন করায় আমি দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। মেহেরবানি করে আগামী দিনগুলোতেও আপনারা আমাদের সঙ্গে কর্মসূচিগুলো সুশৃঙ্খলভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করুন। এ সরকারকে বিদায় করতে হবে। একটু কষ্ট করে হলেও দেশের সার্বভৌমত্ব ও সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে আনুন। সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান, গাড়িগুলো রাস্তায় বের না করে আমাদের কর্মসূচি সফল করার জন্য সাহায্য করুন।’