:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৩ দিনের জন্য সেনা মোতায়েন হতে পারে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির অনুমতি মিললে ২৯ ডিসেম্বর মাঠে নামবে সশস্ত্র বাহিনী।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন ও সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কীভাবে সহায়তা করতে পারেন, সে বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য নির্বাচন কমিশন অনুরোধ জানিয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হোক, তা নির্বাচন কমিশন চায়। এটা একটা প্রারম্ভিক আলোচনা। কীভাবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হবে, কোথায় কোথায় তারা কীভাবে কাজ করবে, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ করবে। তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিলে অবশ্যই নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে। ইসি যেভাবে সহায়তা চাইবে, সেভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে সশস্ত্র বাহিনী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দিনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে মোটামুটি আলোচনা হয়েছে। এবারও ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ (বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা) বিধানের আওতায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হবে। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর ৩৫ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন ছিল। এবারের নির্বাচনে যদি বেশি প্রয়োজন হয়, তাহলে বেশিসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা (ইসি) চাচ্ছে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন হোক। এ বিষয়ে আমার সামান্য সন্দেহ নেই। তারা অত্যন্ত সিরিয়াস। আমরা সশস্ত্র বাহিনী যদি ডেপ্লয় (মোতায়েন) হই, আমরা অবশ্যই সহায়তা করব। এটিই ছিল প্রারম্ভিক আলোচনা। রাষ্ট্রপতি অনুমতি দিলে আমরা অতীতের মতোই আবার ডেপ্লয় হবো। ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় মোতায়েন হবো।’
নির্বাচনের ডিউটিতে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যদের ম্যাজিস্টে্রসি ক্ষমতা থাকবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশন বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কিনা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। সেনাবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা (ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার) থাকবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা হয়নি। গতবার ৩৫ হাজারের মতো সদস্য ছিল। এবার যদি বেশি প্রয়োজন হয় আমরা সেটা করব। গতবার ৩৮৮ উপজেলায় সশস্ত্র বাহিনী এবং ৮৭ উপজেলায় বিজিবি ছিল।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে-পরে মিলিয়ে ১০ দিন বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী ১৭ ডিসেম্বর। পরদিন ১৮ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন। এরপর নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। সবশেষ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৭ জানুয়ারি।
ইসি সূত্রে জানা যায়, ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছিল দুই হাজার ৭১৬টি। এর মধ্যে বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাতিল করেছেন ৭৩১টি, যা মোট দাখিল করা মনোনয়নপত্রের ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বা ২৭ শতাংশ। আর বৈধ হয়েছে এক হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র, যা দাখিল করা মনোনয়নপত্রের ৭৩ দশমিক ০৮ শতাংশ বা ৭৩ শতাংশ।
ইসি সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে সাড়ে ৭ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভোটের মাঠে কাজ করবে। এবার আনসার সদস্য ৫ লাখ ১৬ হাজার জন, পুলিশ ও র্যাবের এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন ও কোস্টগার্ডের দুই হাজার ৩৫০ জন এ ছাড়া বিজিবির ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন নিয়োজিত থাকবেন।
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৫৬১টি আপিল আবেদন জমা পড়েছে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি করে আপিল আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করবে নির্বাচন কমিশন।