:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
অব্যাহত অনিয়ম ও বিধি ভঙ্গের কারণে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার এক আদেশে প্রথম প্রজন্মের ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন করা, পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও পরিচালক নির্বাচনসহ কয়েকটি কারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকটিকে রক্ষায় আমরা গতকাল বৈঠক করে বর্তমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নিই। এরপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে গতকালই বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আজ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমরা মনে করি, এতে ব্যাংকটির গ্রাহকের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থও রক্ষা হবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক আদেশে জানিয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক ‘ঋণনিয়মাচার ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন প্রদান করা, পর্ষদ কর্তৃক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করা, পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংকের শেয়ার একই পরিবারে কেন্দ্রীভূত করা, পরিচালক নির্বাচন বা পুনর্নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি, পর্ষদের গোচরে পরিচালকগণ কর্তৃক আর্থিক অনিয়ম সংঘটন, পর্ষদের নীতিনির্ধারণী দুর্বলতার কারণে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকিং সুশাসন ও শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার মাধ্যমে ব্যাংক-কোম্পানি ও আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে পর্ষদ কর্তৃক সম্পৃক্ত থাকার ঘটনা ঘটেছে।’
বর্তমান পর্ষদ বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে ৭ সদস্যের নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে। নতুন পর্ষদে জয়নুল হক সিকদারের মেয়ে পারভীন হক সিকদার রয়েছেন। তবে তার মা মনোয়ারা হক সিকদার এবং ভাই রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মনোয়ারা হক সিকদার ব্যাংকের সদ্য বাতিল করা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। রন এবং রিক হক সিকদারও পরিচালক ছিলেন।
ন্যাশনাল ব্যাংকে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরোধ সম্প্রতি আদালতে গড়ায়। ভার্চুয়াল এজিএমে পাতানো ভোটের মাধ্যমে তাকে পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে এমন শঙ্কায় পারভীন হক সিকদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আদালত। আজ ওই এজিএম হওয়ার কথা ছিল।
ন্যাশনাল ব্যাংকের দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার মারা যান ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। ন্যাশনাল ব্যাংকে সিকদার পরিবারের শেয়ার রয়েছে ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী যেখানে একক পরিবার, ব্যক্তি বা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারে। নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত শেয়ার তিন মাসের মধ্যে বিক্রির নির্দেশনা দিয়ে গত ১৩ জুলাই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তা না করায় আইনের ১৪ক(৫) ধরায় সরকারের অনুকূলে কেন বাজেয়াপ্ত করা হবে না, তা ১৪ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২১ নভেম্বর চিঠি দেওয়া হয়।