:: সুজন ভট্টাচার্য ::
রাম মন্দির কোনদিনই ধর্মীয় ইস্যু ছিল না। ১৮৪৯ সালে কর্নেল শ্লীম্যান লখনৌএ রেসিডেন্ট কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব নেন। গভর্নর জেনারেল ডালহৌসি তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, যে কোন ভাবেই হোক লখনৌ অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু তার কোন গ্রহণযোগ্য অজুহাত কোম্পানির হাতে ছিল না। ফলে শ্লীম্যানকেও অওএক্ষা থাকতে হয়।
তখনো পর্যন্ত অযোধ্যা অর্থাৎ লক্ষ্ণৌ রাজ্যের পূর্বতন রাজধানী ফৈজাবাদে রাম মন্দির সংক্রান্ত কোন বিসংবাদের কথা শোনা যায়নি। অযোধ্যায় সবথেকে বড় এবং প্রভাবশালী ছিল হনুমানগড়ি মন্দির। লখনৌএর নবাবশাহী সেই মন্দিরের জন্য জমি এবং আর্থিক বরাদ্দের আয়োজনও করতেন। হনুমানগড়ি মন্দিরের সন্তদের রামমন্দির নিয়ে কোন মাথাব্যথার সংবাদও নেই।
১৮৫৩ সালে রামানন্দ প্রতিষ্ঠিত নির্মোহী আখড়া নবাব ওয়াজিদ আলি শাহর কাছে দরবার করেন, রামজন্মভূমির মন্দির ধ্বংস করেই বাবরি মসজিদ স্থাপিত হয়েছে। সেই মন্দির ফিরিয়ে দেওয়া হোক। হনুমানগড়ি মন্দিরের সন্তরা কিন্তু এই দাবীকে সমর্থন করলেন না। একটা ছোটখাটো সংঘর্ষও হল বাবরি মসজিদ চত্ত্বরে। এরপরই ওয়াহাবি সম্প্রদায় দাবী তোলেন একটি প্রাচীন মসজিদ জবরদখল করেই হনুমানগড়ি মন্দির তৈরি করা হয়েছিল।
১৮৫৫-য় হনুমানগড়ি মন্দিরের উপর হামলা হয়। সন্তরা সেই হামলা প্রতিহত করেন। নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ একটি কমিটি গঠন করেন হনুমানগড়ি মন্দিরে আদৌ কোন মসজিদ ছিল কিনা, খতিয়ে দেখার জন্য। একইসঙ্গে বাবরি মসজিদকেও নিয়ে আসা হয় বিবেচনায়। বৃটিশ রেসিডেন্সির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি জানান হনুমানগড়ির ক্ষেত্রে এমন কোন তথ্য নেই।
সেই বছরই মহরমের সময় লখনৌএ শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা হল। আর কর্নেল শ্লীম্যান এই তিনটি ঘটনার ভিত্তিতেই গভর্নর জেনারেলের কাছে রিপোর্ট দিলেন লখনৌএ প্রশাসন অথর্ব হয়ে গেছে। যদিও তিনি অধিগ্রহণের বদলে নবাবের উপর চাপ সৃষ্টির সুপারিশ করেন। অজুহাত পেয়ে যাবার পর ডালহৌসির কাছে শ্লীম্যানের আর কোন প্রয়োজন ছিল না। লখনৌএর দায়িত্ব দেওয়া হল জেনারেল উট্র্যামকে। অধিগৃহীত হল লখনৌ, আর তার পটভূমি তৈরি করে দিল রাম মন্দির। অধিগ্রহণের পর বৃটিশ সরকার মূল মসজিদের বাইরে পুজো দেবার ব্যবস্থা করে দিল। পরবর্তী ইতিহাস সকলেরই জানা।
কলকাতা থেকে