:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই নতুন দর কার্যকর হবে। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। সরকারের নির্বাহী আদেশে এ মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সকল বিতরণ কোম্পানির ২৩০ কেভি এবং ১৩২ কেভি লাইনের জন্য পাইকারি বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৮ টাকা ৪৪ পয়সা এবং ৮ টাকা ৪৭ পয়সা।
৩৩ কেভি লাইনের জন্য পিডিবির বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ টাকা ৬২ পয়সা, আরইবির ক্ষেত্রে ৬ টাকা ২৩ পয়সা, ডিপিডিসির ৮ টাকা ৫৬ পয়সা, ডেসকো ৮ টাকা ৫৮ পয়সা, ওয়েস্টজোনের ক্ষেত্রে ৭ টাকা ৪৬ পয়সা এবং নেসকোর ৭ টাকা ৪ পয়সা।
এর আগে দুপুরে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, মার্চ নয়, ফেব্রুয়ারি থেকেই বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর হবে বলে। বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ও পাইকারি পর্যায়ে ৫ দশমিক ০৭৪ শতাংশ বাড়ছে। নতুন দাম ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে।
বর্তমান সরকারের ১৫ বছরের মেয়াদে গ্রাহক পর্যায়ে এ পর্যন্ত ১৩ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এছাড়া পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে ১৩ বার। তবে সরকারের ইঙ্গিত অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানো হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে ৫ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। যা পরদিন (১ মার্চ) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে। ওই সময় খুচরা পর্যায়ে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা ১৪ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৩৫ পয়সা। শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর (প্রথম ধাপ) ক্ষেত্রে ৪ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ৮৫ পয়সা।
এছাড়াও ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের (দ্বিতীয় ধাপ) ক্ষেত্রে ৬ টাকা ৩১ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের (তৃতীয় ধাপ) ৬ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের (চতুর্থ ধাপ) জন্য ৬ টাকা ৯৯ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৩৪ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের (পঞ্চম ধাপ) জন্য ১০ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে বেড়ে ১১ টাকা ৫১ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের (ষষ্ঠ ধাপ) ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকের বিল ১২ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩ টাকা ২৬ পয়সা করা হয়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে প্রতি ঘনমিটার ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ দশমিক ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়াও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট, স্মল পাওয়ার প্ল্যান্ট ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র) উৎপাদনে ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ দশমিক ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানিয়েছেন, এখন বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ পড়ছে ১২ টাকার মতো, আর ৭ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি বছর বিদ্যুতে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ধীরে ধীরে কয়েক বছর ধরে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। কম ব্যবহারকারী গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম কম বাড়বে, আর উপরের দিকে বেশি বাড়বে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায়। তেল-গ্যাস ও কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারদর ক্ষেত্র বিশেষে একই থাকলেও আগের চেয়ে ডলার প্রতি ৪০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। এখানেই বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়েছে। ডলারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য কাজ করছি।
তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম আধুনিক প্রাইসিংয়ে যাচ্ছি। ইনডেক্স ও ফর্মূলা করা হয়েছে, প্রতিমাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয় হবে, প্রতিবেশী দেশও প্রতিদিন সমন্বয় করে। সেখানে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সরকার অন্যভাবে সহায়তা করে।
বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে বিক্রি করায় লোকসান হচ্ছে, সে কারণে কিছুটা সমন্বয় করা হচ্ছে। আমরাতো খরচ উঠাতে চাচ্ছি। এখন গ্রাহকরা যদি একটু সাশ্রয়ী হন, তাহলে বিল আগের অবস্থায় থাকবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে— গ্রাহকদের মিতব্যয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা।
আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পুরোপুরি ভর্তুকিমুক্ত করতে হবে। সরকারও এ ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন রমজানের আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়ছে।
গত বছরে ১৮ জানুয়ারি শিল্পসহ অন্য খাতে গ্যাসের রেকর্ড ১৭৮ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করা হয়। তবে সেবারও আবাসিকে গ্যাসের দাম বাড়েনি।
এদিকে ২০১০ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১২ বার বেড়েছে। শুধু ২০২৩ সালে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম নির্বাহী আদেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ানো হয়।