:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
টানা ৩১ দিন পর একুশে বইমেলা সমাপ্তি ঘটল। এবারের বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় অন্তত ১৩ কোটি টাকা বেশি। গত বছর মেলায় বিক্রি হয়েছিল ৪৭ কোটি টাকার বই।
বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, অতিরিক্ত দুইদিনসহ সর্বমোট ৩১ দিন শেষে মেলায় নতুন বই এসেছে ৩৭৫১টি। ১ মার্চ পর্যন্ত মেলায় এসেছেন প্রায় ৫৯ লাখ দর্শনার্থী। মেলায় এবার মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ৬০০টি বইয়ের।
এ বছরই সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক বই বিক্রি হয়েছে। ২০২৩ সালে আনুমানিক ৪৭ কোটি, ২০২২ সালে সাড়ে ৫২ কোটি, ২০২১ সালে ৩ কোটি ১১ লাখ এবং ২০২০ সালে ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়।
শনিবার (২ মার্চ) বিকালে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক শাহেদ মমতাজ।
এ ছাড়াও সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ পুরস্কার দেওয়া হয়। বইমেলায় নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্যপ্রকাশ (প্যাভিলিয়ন), নিমফিয়া পাবলিকেশন (২-৪ ইউনিট), বেঙ্গল বুকস (১ ইউনিট)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়।
এ ছাড়াও ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে মনজুর আহমদ রচিত ‘একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত ‘যাত্রাতিহাস বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত’ গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট’ প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকস মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ দেওয়া হয়। শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে ২০২৩ এ গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ দেওয়া হয় ‘ময়ূরপঙ্খিকে’।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার পিতার স্বপ্নকে ধারণ করে শিল্প-সাহিত্যসহ সকল কিছুর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। তিনি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসও জনগণের কাছে উন্মুক্ত করেছেন। বইমেলার মাধ্যমে আমরা আমাদের সৃজনশীলতাকে উদযাপন করি। পৃথিবীর আর কোথাও এমন বইমেলা খুঁজে পাবেন না। কারণ এই বইমেলা হচ্ছে আমাদের আবেগের বইমেলা, জাতি হয়ে ওঠার বইমেলা।’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘একটি সফল বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠান আনন্দময় হতে পারতো। কিন্তু গত পরশু রাতে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সবাই মর্মাহত। মৃতদের জন্য আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। যারা অসুস্থ তাদের জন্য দোয়া করি, যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারেন।’
আগামী বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা করার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুনেছি এখানে আগামীবার থেকে বইমেলা করা যাবে না। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো বইমেলা এখানে করার। কেননা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাঠে মেলা হওয়াটাই এর ঐতিহ্য। আমরা মনে করি একটি বইমেলা যথেষ্ট নয়। আমরা অন্তত দুটি বইমেলা করতে চাই। ফেব্রুয়ারি মাস ছাড়া বছরে অন্য কোনও সময়ে অপর মেলাটি আয়োজন করার চেষ্টা করবো। এ জন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’
এ সময় বাংলা একাডেমির সভাপতি কবি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদাসহ আরও অনেকে।