:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে এস আলম শিল্প গ্রুপের মালিকানাধীন একটি চিনির গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে গেছে। আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের চেষ্টায় প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
এই ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পুরোপুরি নির্বাপণ হয়নি।
সোমবার বিকাল ৪টার দিকে মিলের ১ নম্বর গুদামে এ আগুন লাগে, যেখানে এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ছিল বলে দাবি করা হয়।
কোনো স্থাপনায় আগুন লাগার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণে আসার অর্থ হচ্ছে সেটি আর ছড়াচ্ছে না। এরপর স্থাপনার ভেতর-বাইরে তল্লাশি চালিয়ে কোথাও আগুন না পেলে পুরোপুরি নির্বাপনের ঘোষণা দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে।
আগুন লাগার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের একাধিক ইউনিট সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ১৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে।
কারখানা সূত্র জানায়, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও থাইল্যান্ড থেকে চিনির কাঁচামাল এনে পরিশোধন করা হয় দুইটি প্ল্যান্টে। এর মধ্যে প্ল্যান্ট–১ এর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৯০০ টন, প্ল্যান্ট ২ এর উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ টন। থাইল্যান্ড ও ফ্রান্সের প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তায় এ কারখানাটি পরিচালিত হচ্ছে। এর আগে, গত শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডে এস আলমের আরেকটি গুদামে আগুন লেগেছিল।
সোমবার (৪ মার্চ) বিকেল ৩টা ৫২ মিনিটের দিকে কর্ণফুলী চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর এলাকায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলস লিমিটেডের গুদামে এ ঘটনা ঘটে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুনের সূত্রপাত বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হয়নি।
কর্ণফুলী মডার্ন ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মোহাম্মদ রামিম নাগরিক নিউজকে বলেন, ‘বিকেল ৩টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগার খবর আসে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের টিম ঘটনাস্থলে যায়। আমাদের স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট প্রথম কাজ শুরু করে। পরে আগুনের ভয়াবহতা বাড়লে লামারবাজার, নন্দনকান, চন্দনপুরা, আগ্রাবাদ ও সাতকানিয়া থেকে বাকি ইউনিট যুক্ত হয়। কর্ণফুলী নদী থেকে সরাসরি পানির লাইন নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানতে পারা যায়। তবে কোনো হতাহতের খবর আমাদের কাছে আসেনি।’
এদিকে এস আলম গ্রুপের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাগরিক নিউজকে বলেন, ‘সকাল থেকেই চিনির গুদামে আমাদের কার্যক্রম চলছিল। কীভাবে আগুন লেগেছে তা এখনো জানতে পারিনি। আগুনে কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছি। রমজান উপলক্ষে এসব চিনি আনা হয়েছিল। রোজায় চিনির চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের বড় ধরনের উদ্যোগ ছিল। তবে আগুন লেগে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’
কারখানার এইচআর অ্যাডমিন মোহাম্মদ হোসাইন জানান, কারখানার এক নম্বর গুদামে প্রায় এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ছিল। রমজানে বাজারজাত করার জন্য চিনিগুলো আমদানি করার পর গুদামে রাখা ছিল। পরিশোধন করার পর চিনিগুলো বাজারজাত করার কথা ছিল। কারখানা প্রাঙ্গনে আরও তিনটি গুদামে তিন লাখ টন চিনি রয়েছে। আগুনে যাতে ওই গুদামগুলোর কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়, আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী কাজ করছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস নষ্ট কতগুলো পাম্প নিয়ে এসেছে, যেগুলো কোনো কাজে আসেনি। আগুন নির্বাপনে আমরা ফায়ার সার্ভিসকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে তারা তাদের মতো করে কাজ করছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। যেখানে আগুনের সূত্রপাত ঘটে, ওই সময় সেখানে কেউ ছিলেন না।’
আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি টন চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৯৫ ডলারে। প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসেবে ধরলে প্রতি টন চিনির আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ৬৫ হাজার ৪৫০ টাকা। এই হিসেবে এক লাখ টন চিনির আমদানি মূল্য দাঁড়ায় আনুমানিক ৬৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শুল্ককর পরিশোধসহ হিসাব করলে ওই গুদামে প্রায় হাজার কোটি টাকার চিনি ছিল। আগুনে চিনিগুলো পুড়ে যাচ্ছে। সেই হিসেবে গুদামটিতে আগুন লেগে লোকসান হতে যাচ্ছে প্রায় হাজার কোটি টাকা।