:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসংগ্রামী ও বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১৩ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
খোন্দকার দেলোয়ার ছিলেন গণতন্ত্র ও জনগণের মুক্তির সকল সংগ্রামের অগ্রসেনানী। তাঁর দৃঢ়তা, অটুট মনোবল, সাহস, ধৈর্য্য এবং ব্যক্তিত্বে তিনি ছিলেন অনন্য উচ্চতার একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীকার আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।
এক-এগারোর সময় অবৈধ সরকার শত প্রলোভন ও চাপ সৃষ্টি করেও তাকে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের মূলধারা থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। ওই সময়ে তার এই সাহসী ভূমিকা তাকে নেতৃত্বের এমন এক স্তরে উন্নীত করেছিলো, যা ছিল হিমালয়তুল্য। বেগম খালেদা জিয়া জেল থেকে বের হবার পূর্ব পর্যন্ত তিনিই ছিলেন দলের নেতা, মুখপাত্র, দিক-নির্দেশক এবং দলের প্রাণপুরুষ।
খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ১৯৫২ সালে তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। সিলেটের মুরারী চাঁদ কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করে পরে মানিকগঞ্জ মহকুমা আদালতে আইন পেশায় যোগদেন।
১৯৫৭ সালে আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৬৫ সালে পার্টির মানিকগঞ্জ মহকুমা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে ছয়দফা আন্দোলনে ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তিনি ১৯৭০ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রার্থী হয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক এবং মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর মানিকগঞ্জে বিপ্লবী কম্যান্ড কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন তিনি।
১৯৭৮ সালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল গঠিত হলে তিনি যোগ দেন এবং দলের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৯ সালে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দলের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
স্বৈরাচারী শাসন বিরোধী আন্দোলনে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।
তিনি মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর-দৌলতপুর) আসন থেকে ২য়, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোটপাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একাধিকবার তিনি চিফ হুইপ ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন ও দুই মেয়াদে পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের সভাপতি এবং বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সদস্য ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে ভূমিকার জন্য ২০০৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তিনি ২০০৭ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে আটকের রাতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর থেকে আমৃত্যু বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ২০১১ সালের ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।