:: নাগরিক বিনোদন ::
চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ৪২ দিন ধরে ভেন্টিলেশনে থাকার পর মারা গেছেন ঢালিউড অভিনেতা পার্থসারথি দেব। মৃত্যুকালে বর্ষীয়ান এই অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
আর্টিস্ট ফোরামের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ২২ মার্চ রাত ১১টা ৫০ মিনিটে মারা গেছেন পার্থসারিথ দেব। শোক প্রকাশ করে বলা হয়, ‘তাঁর অকাল প্রয়াণে ফোরাম গভীর শোক জ্ঞাপন করছে। আজ ২৩ মার্চ, ২০২৪ টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে ১২টার সময় অভিনেতার নশ্বর দেহ রাখা থাকবে। অভিনেতার প্রিয়জন, সতীর্থ, গুণগ্রাহীরা সেসময় স্টুডিওতে এসে শেষ শ্রদ্ধা ও মাল্যদান করতে পারেন।’ বিবৃতিতে সই করেছেন আর্টিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন পার্থসারথি। তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ ছিল। দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন পার্থসারথি দেব।
গত এক মাস ধরে হাসপাতালেই ছিলেন তিনি। তাঁর দেখভালের দায়িত্ব স্বইচ্ছায় কাঁধে তুলে নেন অভিনেতা বাপি দাস। পার্থবাবুর সিওপিডি অর্থাৎ শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। সেই সঙ্গে ফুসফুসেও সংক্রমণ হয়েছিল। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল খুবই কঠিন একটি পরিস্থিতির। জ্ঞান ছিল। কিন্তু কারও সঙ্গেই কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। তবে চিনতে পারছিলেন সবাইকেই। প্রত্যেক দিন হাসপাতালে যাচ্ছিলেন অভিনেতা বাপি। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছিল অভিনেতার সুস্থ হতে সময় লাগবে। পরিবার বলতে রয়েছে তাঁর ভাইপো, ভাইঝিরা। তাঁরা অবস্য নিয়মিত খোঁজখবর রাখছিলেন। তবে শোনা গিয়েছিল আর্টিস্ট ফোরামের তরফে তাঁর চিকিৎসার খরচের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছিল তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী এবং মেয়ে কি তাঁকে দেখতে গিয়েছিল? অন্দরের খবর তাঁরা যাননি।
দীর্ঘ ৪০ বছর পশ্চিম বাংলার বিনোদনজগতে জড়িত ছিলনে পার্থসারথি দেব। বিভিন্ন ধারাবাহিকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ধারাবাহিকসহ ২০০টির বেশি ছবিতে কাজ করেছেন অভিনেতা পার্থসারথি দেব। নাটকের মঞ্চেও ছিল তাঁর সাবলীল অভিনয়। ‘চুনি-পান্না’, ‘জয়ী’, ‘মিঠাই’-এর মতো ধারাবাহিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’, ‘লাঠি’ থেকে ‘প্রেম আমার’সহ একাধিক জনপ্রিয় বাংলা সিনেমায়। ছোট পর্দার জন্য ‘সত্যজিতের গপ্পো’ সিরিজেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। গত বছর ‘বগলা মামা যুগ যুগ জিও’তেও তাঁকে দেখা গেছে। এ ছাড়া গত বছর দুর্গাপূজায় মুক্তি পাওয়া আলোচিত সিনেমা ‘রক্তবীজ’–এ অভিনয় করেছেন তিনি। যার ফলে দর্শকের মধ্যে বেশ পরিচিত ছিলেন তিনি।
সম্প্রতি নন্দিতা রায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘রক্তবীজ’ সিনেমায় দেখা গিয়েছিল তাকে। তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রূপাঞ্জনা মিত্রসহ তার সহশিল্পীরা।
জয়জিৎ ব্যানার্জি তার ফেসবুকের পাতায় লেখেন, ‘চলে গেলেন একজন অসাধারণ অভিনেতা পার্থসারথি দেব। থাক আজ আর আমাদের সেসব দিনের কথা বলবোনা কমরেড।’
অভিনেত্রী রপাঞ্জনা মিত্র পার্থসারথি দেবকে নিয়ে নিজে ফেসবুকে লম্বা পোস্ট করেন। স্মৃতির পাতা থেকে অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা লেখেন, “পার্পল স্টুডিওতে তোমার এক ছবির কাজ চলছিল আর আমাদের অনুরাগের ছোঁয়ার শুট চলছিল…তুমি নিজে এসে দেখা করে গেলে.., কয়েকজন তোমার চেনা শিল্পী আছে জেনে তুমি তোমার শট দিয়ে আমাদের সিন দেখতে এসেছিলে, এই তো গেলো মাসের কথা…কোর্ট দৃশ্য চলছিল আমাদের।
দেবদূত ঘোষ দা, দিব্যজ্যোতি দত্ত, অর্জুন চক্রবর্তী আর আমি তোমার চেনা কয়েকজনের মধ্যে আছি জেনে তুমি আমাদের সাথে এসে বসলে একটু অবসর সময় কাটালে, অল্প আড্ডা এবং সেই প্রাণ খোলা হাঁসি আবার হাঁসলাম আমরা… চা খেলাম, তারপর আবার যে যার মতো শট দিতে যাওয়া… তার আগে সেই পুরোনো ডাকটা আবার তোমার মুখে শুনলাম ‘রূপসী রে দেখা হচ্ছে আবার…”।
রূপাঞ্জনা আরও লেখেন, ‘জানতাম না ওইটাই আমাদের শেষ দেখা…ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু সিনিয়র শিল্পীদের মধ্যে তুমি সেই একজন যে আমাদের মতন নতুন শিল্পীদের বুলিং হওয়া থেকে বাঁচাতে সেই সময়…স্নেহ এবং সাহায্যের হাত সব সময় বাড়িয়ে দিতে তাই আমরাও তোমাকে সম্মানের স্থানেই রেখেছি এবং রাখবো…তুমিও টাটা বলতে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময়…তোমাকেও টাটা বলছি আজ…হেভ এ সেফ জার্নি! গুড বাই! পার্থসারথি দেব।’
এই অভিনেতার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রূপাঞ্জনা মিত্রসহ তাঁর সহশিল্পীরা। জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘চলে গেলেন একজন অসাধারণ অভিনেতা পার্থসারথি দেব। থাক আজ আর আমাদের সেসব দিনের কথা বলব না কমরেড।’
রূপাঞ্জনা আরও লেখেন, ‘জানতাম না ওইটাই আমাদের শেষ দেখা…ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু সিনিয়র শিল্পীর মধ্যে তুমি সেই একজন যে আমাদের মতন নতুন শিল্পীদের বুলিং হওয়া থেকে বাঁচাতে সেই সময়…স্নেহ এবং সাহায্যের হাত সব সময় বাড়িয়ে দিতে, তা–ই আমরাও তোমাকে সম্মানের স্থানেই রেখেছি এবং রাখব…তুমিও টাটা বলতে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময়, তোমাকেও টাটা বলছি আজ…যাত্রা শুভ হোক! বিদায়! পার্থসারথি দেব।’
ব্যক্তিগত জীবনে একসময় দূরদর্শনের মেকআপ আর্টিস্ট বিনীতা দেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিয়ে করেছিলেন অভিনেতা। তাঁদের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের সেই সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়। এখন আইনি বিচ্ছেদ ওহয়ে গিয়েছে দুজনের। পার্থসারথির বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন বিনীতা। প্রাক্তন স্বামীর অসুস্থতার খবর অজানা নয় তাঁর, তবে অভিনেতার অসুস্থতায় প্রাক্তন স্ত্রী বিনীতা বা তাঁর মেয়ে কেউই খোঁজ নেননি বলেই জানা যায়।