:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর কনসার্ট হলে ভয়াবহ হামলায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৬০ জন। আহত কমপক্ষে ১০০ জন। এই সন্ত্রাসী হামলার দায় নিয়েছে আইএসআইএস। তারা ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর একটি শাখা।
শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে মস্কোর ক্রকাস সিটি হলে পাঁচ বন্দুকধারী হামলা চালায়। হামলায় সন্ত্রাসীরা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের পাশাপাশি অটোমেটিক বন্দুক ব্যবহার করেছে। কনসার্টের ভিড়ের মধ্যে এলোপাতাড়ি হামলার কারণে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে।
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে একটি পোস্টে দায় স্বীকার করে আইএস। এই হামলায় জড়িত ছিল আইএসআইএস-কে। আইএসের এই শাখার পুরো নাম ইসলামিক স্টেট খোরাসান। ইরান, তুর্কমেনিস্তান এবং আফগানিস্তানের অংশবিশেষ নিয়ে খোরাসান নামের একটি এলাকা গঠিত। ২০১৪ সালের দিকে ইসলামিক স্টেট খোরাসানের উত্থান ঘটে এবং নৃশংস একটি দল হিসেবে তারা কুখ্যাত হয়ে ওঠে। তবে ২০১৮ সালের পর থেকে তাদের সদস্য সংখ্যা কমে এসেছে।
আফগানিস্তানের ভেতরে, বাইরে, মসজিদ এবং অন্যান্য স্থাপনায় হামলার জন্য ইসলামিক স্টেট খোরাসানের কুখ্যাতি রয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে জানা যায়, ইরানে জোড়া বোমা হামলায় প্রায় ১০০ মানুষের মৃত্যুর পেছনে দায়ী ছিল আইএসের এই শাখাটি।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কাবুলে রাশিয়ার দূতাবাসে হামলা, ২০২১ সালে কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা – তাদের কার্যক্রমের মাঝে এগুলো উল্লেখযোগ্য।
রাশিয়ার মস্কোয় হামলার ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক আগে নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ৭ মার্চ রাশিয়ায় মার্কিন দূতাবাস একটি নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে।
সতর্কবার্তায় বলা হয়েছিল, মস্কোয় বড় জমায়েতে উগ্রপন্থিদের হামলার পরিকল্পনার খবর জানা গেছে। এ সতর্কবার্তায় বড় জমায়েতের মধ্যে কনসার্টের কথাও বলা হয়েছিল। সেই সঙ্গে সতর্কবার্তায় মস্কোয় অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার জন্য বড় জমায়েত এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, আইএসআইএস-কে শীঘ্রই বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিগত কয়েক বছরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ইসলামিক স্টেট। তারা বারবার পুতিনের সমালোচনা করেছে। এছাড়া মুসলিমদের বিরোধিতায় বিভিন্ন কার্যক্রমে রাশিয়ার অংশগ্রহণও ভালো চোখে দেখে না আইএস।
গুলি, আর্তনাদ ও মস্কোর কনসার্ট হলের ভয়ংকর পরিস্থিতি
সংগীত প্রযোজক অ্যালেক্সি টেলিফোনে বলেন, গান শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই এই হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শুনি। এক নারী গগনবিদারী চিৎকার করে ওঠেন। সে সময় আরও অনেকে চিৎকার শুরু করেন।’ অ্যালেক্সি আরও বলেন, তিন থেকে চারটি বিস্ফোরণের শব্দ তাঁরা শুনেছেন। এরপর আরও বেশি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।
এরপর অ্যালেক্সি চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে দেখেন। মানুষজনকে মঞ্চের দিকে ছুটে যেতে দেখেন তিনি। সে সময় চারদিকে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
টেলিগ্রাম ও রাশিয়ার অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সশস্ত্র দুজন বন্দুকধারীকে কনসার্ট হলের দিকে যেতে দেখা গেছে। এসব ভিডিওতে মেঝেতে অনেক মরদেহ পড়ে থাকার ছবি দেখা গেছে। মানুষকে বাইরে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।
এই ব্যান্ড দলের ভক্তদের অনেকে আসনের পেছনে লুকিয়ে যান। সে সময় হলের মধ্যে গুলি চলছিল।
অন্যদের মতো অ্যালেক্সিও আতঙ্কিত ছিলেন। তিনি একটি বাক্স দিয়ে নিজেকে রক্ষা ও আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন। পালানোর পথ খুঁজছিলেন। বন্দুকধারীদের কাউকে দেখেননি বলে জানান অ্যালেক্সি। তবে যখন তিনি দৌড়াচ্ছিলেন, তখন ধোঁয়া ও ছাই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকতে দেখেন।
ঘটনাস্থলে থাকা এক সাংবাদিক বলেন, গ্রেনেড অথবা বোমা থেকে অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে পুরো কনসার্ট হল যেন আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয়। উদ্ধারকারী দল ও জরুরি সেবা সংস্থাগুলো সারা রাত ধরে উদ্ধারকাজ চালায়।
কালো ধোঁয়ায় আকাশ ছেয়ে যায়। ক্রোকাস সিটি হলে বেজমেন্টে থাকা ও ছাদে আশ্রয় নেওয়া দর্শকদের উদ্ধার করতে চেষ্টা করে যাচ্ছিল রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী।
ঘটনাস্থলে ছিলেন এএফপির এক সাংবাদিক। তিনি ছাদ থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখেছেন। আগুনের লেলিহান শিখা কীভাবে পুরো কনসার্ট হলে ছড়িয়ে পড়ে, তার বর্ণনা দিয়েছেন। রাশিয়ার গণমাধ্যম বলেছে, কনসার্ট হলের ছাদটি আংশিকভাবে ধসে পড়েছে।
শত শত পুলিশ ও দাঙ্গাবিরোধী স্কোয়াড বাহিনী ক্রোকাস সিটি হল বন্ধ করে দেয়। ক্রোকাস সিটি হলের কাছে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি এসে পৌঁছায়। অন্তত তিনটি হেলিকপ্টার ক্রোকাস সিটির ওপরে চক্কর দেয়।
রাশিয়ার জরুরি পরিস্থিতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, এখনো ছাদে আটকা মানুষদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। কনসার্ট হলের বেজমেন্ট থেকে প্রায় ১০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।