:: মুরাদ হাই ::
মিনার আর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ব্যাচের হলেও ভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ছাত্র ছিলাম। ক্যাম্পাসের চেনা মুখ কিন্তু কখনো কথা হয় নাই।
১৯৮৭ সালের কথা। আমি তখন একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করি। একদিন মিনার তার নতুন বের করা সাপ্তাহিক বিচিন্তা’র একাউন্ট খোলার জন্য আমার অফিসে এসে হাজির। ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ দেখে আমার টেবিলে এসে বসলো। না বলা পর্যন্ত আমি জানতাম না যে ‘বিচিন্তা’ মিনারের পত্রিকা। যদিও আমি বিচিন্তার নিয়মিত পাঠক। যখন জানলাম এই পত্রিকা মিনারের আর সে নিজে তার সম্পাদক, আমিতো যারপরনাই খুশি হলাম।
ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ, সমবয়সী। তবু আপনি সম্বোধন দিয়ে শুরু হয়ে সেটা আপনিতে থেকে গিয়েছিল। অল্প দিনে আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। মিনার যখুনি আসতো, অনেক কাপ চা খেয়ে আড্ডা মেরে যেত। গা থেকে তখনো ক্যাম্পাসের গন্ধ যায় নাই। তাই আমার টেবিলে বন্ধুরা যখন তখন এমনিতে এসে চা খেয়ে আড্ডা মেরে যেত। ম্যানেজার একটু বাঁকা চোখে তাকালেও বেশি কাজ করে দিয়ে সেটা পুষিয়ে দিতাম।
মিনারের বিচিন্তা পত্রিকা তখন বাজারের হট কেক। সামরিক সরকারের কার্য কলাপের বিরুদ্ধে সরাসরি লেখার মত এত সাহস মিনার ছাড়া আর কার হবে।
ব্যস্ততার কারণে মিনার সব সময় ব্যাংকে কম আসতে পারত। কিন্তু কোন দরকার হলেই ফোন করে বলত – হাই, আমি ঢাকার বাইরে আছি, আমার লোককে একাউন্ট থেকে এই পরিমান টাকা দিয়ে দিয়েন। আমি পরে এসে চেক দিয়ে যাব।
আমিও নিজ দায়িত্বে টাকা দিয়ে দিতাম। এভাবে সখ্যতা অনেক গভীর হয়ে গেল।
সমবয়সী আর এক ক্যাম্পাসের মানুষ হওয়াতে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মত ঠাট্টা ইয়ার্কি চলত আমাদের। একবার মিনার ব্রাজিলের রিওডিজেনিরোতে বেড়াতে গেল। এসে আমাকে বলল, হাই, রিওতে না গেলে আপনার জীবন বৃথা। ব্রাজিলের মেয়েরা মনে হয় বেহেস্তের হুর পরি। আপনি না দেখলে বিশ্বাস করবেন না।তারপর অনেক ছবি দেখালো।
আমার এই বন্ধুটার বান্ধবী ভাগ্য খুব ভালো ছিল। বাকপটু আর দেখতে খুব হ্যান্ডসাম হওয়ায় মেয়েরাই পটে যেত বলা যায়। যার জন্য তসলিমা নাসরিনও মিনারের সাথে না জড়িয়ে পারে নাই। মিনার তার জীবনের কোনো গল্পই আমার কাছে না বলে থাকত না।
১৯৮৮ সালের দিকে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে লিখে মিনার কোনঠাসা হয়ে পড়ল। সরকার তাকে গ্রেফতার করে আকাশচুম্বী জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিন্তার প্রকাশনা বন্ধ করে দিল। জেল থেকে একদিন মিনার তার লোক দিয়ে আমার কাছে একটা চিঠি পাঠালো। লিখেছিল আমি যেন তার পত্রিকার একাউন্ট থেকে বেশির ভাগ টাকা উঠিয়ে তার লোকের হাতে দিয়ে দেই। কারণ সরকার তার একাউন্ট ফ্রিজ করে দিতে পারে। অনুরোধ রক্ষা করেছিলাম। তারপর অনেকদিন আর কোন খবর পাই নাই মিনারের।
১৯৮৯ সালে আমি আমেরিকা চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে খবর পেলাম মিনার নাকি ওখানেই। খুঁজে বের করে ফোন করলাম। গলা শুনে খুব খুশি।
বলে, হাই, অনেক কষ্টে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে দেশ থেকে পালিয়ে চলে এসেছি, নইলে এরশাদ হয়ত আমাকে মেরেই ফেলত।
ভাগ্যিস তখন দেশে স্বৈরাচার সরকার থাকলেও এখনকার মত গুম হত্যা এত বেশি ছিল না।
তারপর আর কি, দুজনে এক শহরে থাকি। দেখা অনেক বেশি না হলেও কথা হত প্রায় দিনেই। জীবিকার জন্য মিনার ট্যাক্সি চালাত আর আমি একটা স্টোরে সেলসম্যানের কাজ করতাম। নির্দিষ্ট কিছু বন্ধুবান্ধবের বাইরে কারো সাথে মিশতে পারত না মিনার। রুম মেট নিয়ে নয়, একা থাকতে পছন্দ করত সে।
প্রাণশক্তিতে ভরপুর আর হইচই করা মিনার মাঝে মাঝে খুব হতাশায় ভুগত। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে এই দেশে থাকায় বৈধতা পেতে দীর্ঘ সময় লাগছিল। দেশে যেতে পারছিল না নিজের মা বাবা ভাইবোন দের দেখতে। নিজের জীবনে মিনার কখনো হিসাব করে চলত না। কিন্তু এই বোহেমিয়ান ছেলে নিয়ম করে প্রতি মাসে বাবা মা’র জন্য দেশে টাকা পাঠাত।
অন্যদের মত পয়সা কামানোর জন্য সে জান প্রাণ দিয়ে কাজ করত না। ঠিক যতটুকু হলে প্রয়োজন মিটবে ততটুকু কাজ করত। বাকি সময় নিজের বাসায় শুয়ে বসে একা কাটিয়ে দিত। কম সময়ে কম বয়সে দেশের এত প্রথিতযশা সাংবাদিক আমেরিকায় এসে সেই পেশায় একেবারে মন দেয় নাই। যোগ দেয় নাই এখানকার আমাদের দেশীয় কোনো সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনে। নিজের একাকিত্বের জগতে ডুবে থাকত মিনার।
একবার খুব হতাশ হয়ে আমাকে ফোন করে বলে – হাই, একটা নরমাল জব যোগাড় করে দেন তো। এই জীবন আর ভালো লাগছে না। বিভিন্ন কোম্পানিতে এপ্লাই করে সেজে গুজে ইন্টারভিউও দিয়ে ফেলল বেশ কয়েকটা। পরে আমাকে বলে, ধুর, এসব কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। খাটুনি বেশি, পয়সা কম। তাছাড়া কারো হুকুম তামিল করা আমার পক্ষে আসলে সম্ভব নয়। আমার ট্যাক্সি চালানই ভালো। স্বাধীনতা আছে।
ভীষণ স্বাধীনচেতা আর একরোখা ছেলে দেশে যেমন কখনো কোন ভয় ভীতির কাছে মাথা নত করে নাই, তেমনি কোনো লোভ লালসার কাছে নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেয় নাই। তেমন হলে অনেক আগেই দেশে সরকারের সাথে সমযোতা করে দেশে ফিরে গিয়ে অনেক আরাম আর বিলাসবহুল জীবন কাটাতে পারত। কিন্তু সে কম্প্রমাইজ করতে শিখে নাই।
১৯৯৯ সালে আমরা খুব ঘটা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের সম্মেলন করেছিলাম নিউইয়র্কে। আমি তার মূল আয়োজকদের একজন ছিলাম। মিনার এর দায়িত্ব ছিল এই সম্মেলনের সব প্রকাশনার। লিফলেট, আমন্ত্রণ পত্র, পোস্টার,স্মরনিকা এসব ডিজাইন, কম্পোজ সব মিনারের দায়িত্বে ছিল। মিনারকে বলা হয়েছিল সুন্দর একটা স্লোগান ঠিক করার জন্য, যেটা থাকবে আমাদের সব প্রকাশনা আর ব্যানারের উপরে। বেশি চিন্তা না করেই মিনার বলে দিয়েছিল শ্লোগান হবে “ঢাকা আমার বিশ্ববিদ্যালয়।”
ইংল্যান্ডের চ্যাপ্টা লাল প্যাকেটের কিং সাইজ ডানহিল সিগারেট ছিল মিনারের ব্র্যান্ড। খুব কায়দা করে সিগারেট ধরাতো। আয়েস করে টান দিয়ে হাসিমুখে কথা বলতো মিনার। খুব সুন্দর অনুষ্ঠান করতে পেরেছিলাম সেবার আমরা। ঢাকা থেকে ভাইস চ্যান্সেলর এসেছিল প্রধান অতিথি হয়ে। মিনার প্রকাশ করেছিল সুন্দর ডিজাইন করা কভারে আমাদের অনুষ্ঠানের স্মরনিকা, যা অনেক বাহবা কুড়িয়েছিল।
কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন ফোন করে বলে- হাই, ভাবতেসি এখান থেকে একটা বাংলা পত্রিকা বের করব। আপনি সাথে থাইকেন।
বলেছিলাম, অবশ্যই থাকব। নিজের অভিজ্ঞতা ঝালাই করার জন্য স্থানীয় একটা বাংলা পত্রিকায় যোগ দিল স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে। ওই পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে নিজের জীবন কাহিনী লিখা শুরু করেছিল। কিন্তু কোনো কারণে পত্রিকার মালিক পক্ষের সাথে বনিবনা না হওয়ায় ওই কাজ ছেড়ে দিল অল্পদিনে।
ভীষণ অস্থির মিনার হঠাৎ একদিন আমাকে জানালো সে আর নিউইয়র্কে থাকবে না। টেক্সাসে চলে যাচ্ছে। ওখানে কার সাথে নাকি প্রেম হয়েছে। ওখানে গিয়ে বিয়ে করে সংসারী হবে। সত্যি টেক্সাসে গিয়ে বিয়ে করে আমাকে ফোনে ওর স্ত্রীর সাথে পরিচয় করে দিয়েছিল। কিন্তু বেশিদিন টেকে নাই সেই সম্পর্ক। চিরাচরিত বোহেমিয়ান মিনার – সংসার যাকে ধরে রাখতে পারে না। কোন অজ্ঞাত কারণে খুব অল্পদিনের ভিতর টেক্সাসের পর্ব চুকিয়ে গোয়ালের গরু গোয়ালে ফিরে এলো।
এরপর একদিন আমাকে ফোন করে খুব এক্সাইটেড হয়ে বলে – হাই, একটা খনির সন্ধান পাইসি। জানতে চাইলাম কি ব্যাপার। তখন সে আমাকে অনলাইন চ্যাট সার্ভার Paltalk এর গল্প শোনালো। আমি কিছুই বুঝছিলাম না। সে আমাকে স্টেপ বাই স্টেপ কি করতে হবে বুঝিয়ে বলল কি করে এই চ্যাট সার্ভারে বাংলা চ্যাট রুমগুলিতে গিয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা দেশের ছেলে মেয়েদের সাথে গল্প আড্ডা দেয়া যায়। মিনার নাম নিল নিলয় না জানে।কিছুদিন পর নাম পাল্টিয়ে হলো ফেরারী মিছিল – এই নামে মিনার অনেক জনপ্রিয় ছিল প্যালটকে। এই প্যালটকে তার সাথে পরিচয় হয় তার হবু স্ত্রী, যাকে সে লাজুক বলে ডাকত। সে কথায় পরে আসছি।
মিনারের একদিনের কথা মনে হলে এখনো অনেক হাসি আসে। ধর্ম নিয়ে সে খুব কথা বলতে চাইতো না। ভুল করেও কখনো পশ্চিম দিকে আছাড় খেয়েছে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে।
হঠাৎ একদিন বিকাল বেলায় ফোন করে বলে – হাই, আমি আজ একটা অদ্ভুত বিষয় আবিস্কার করলাম। সেটা কি জানেন ?
জিগ্গেস করলাম কি ব্যাপার বলেন।
উত্তরে সে বলে – ম্যান, এতদিন বুঝি নাই কিন্তু আজ টের পাইসি আসলেই আল্লাহ আছে।
জানতে চাইলাম হঠাৎ কেমন করে টের পেল।
তখন সে ঘটনা খুলে বললো যার সারমর্ম হলো – ট্যাক্সিতে কাস্টমার নিয়ে যাচ্ছিল।হঠাৎ চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাথাও ঠিকমত কাজ করছিল না। বুঝতে পারছিল কলাপ্স করতেসে। তখন সে মনে মনে বলে উঠলো – আল্লাহ বাচাঁও। মুহুর্তের ভিতর সে নাকি সম্বিত ফিরে পেয়ে চোখে দেখতে পেতে শুরু করেছে। তারপর গাড়ি একপাশে দাড় করিয়ে আমাকে ফোন করে বলে, আমি কাল শুক্রবার জুমা’র নামাজে যাব। আপনি প্লিজ আলমকে বইলেন, আমাকে যেন নিয়ে যায়।
হঠাৎ হঠাৎ করে এক একটা বিষয় তার মাথায় উদয় হত। আবার কয়দিন পরেই সেটা ভুলে যেত। এর ভিতর তার বৈধতার কাগজ হয়ে গেল। প্ল্যান করছে দেশে যাবে বাবা মা, ভাই বোনদের দেখতে। বলছিল ভালো লাগলে দেশে থেকেও যেতে পারে। বিদেশ আর ভালো লাগছে না। এই সময়ে সে প্যালটকে পরিচয় হওয়া ডাক্তার মেয়ের সাথে ভালোভাবে জড়িয়ে গেল। আমাকে প্রায়ই বলত, দেশে তার খুব বড়লোক একটা বন্ধু আছে। দেশে ফিরে গেলে ওই বন্ধু তাকে অনেক হেল্প করবে।
আমি প্রতি বছর দেশে যাই বেড়াতে। দেশে গিয়ে উপলব্দি করেছি, দেশের মানুষেরা শুধু যার মাথায় তেল আছে, তাকে আরো তেল দেয়। সে কথা মিনারকে বলেছি। মিনার আমার কথা হেসে উড়িয়ে দিত। বলতো, ম্যান সবাই এক রকম না। এই সময়ে যে কোন একটা ব্যাপার নিয়ে মিনারের সাথে আমার ভুল বোঝাবুঝি হয়ে কথা বন্ধ হয়ে যায়। আমার খুব বাজে একটা অভ্যাস হলো একবার সাথে কথা বন্ধ হলে আমি সেটা আর ঠিক করতে পারিনা। মিনার আমাকে অনেক বার ফোন করেছে, কিন্তু আমি ধরি নাই। অনেক ভয়েস মেইল রেখেছে ক্ষমা চেয়ে, তবুও আমি কথা বলি নাই। এখন আর ইচ্ছা হলেও কথা আর বলতে পারব না।
শুনেছি সেই ডাক্তার মেয়ের সাথে প্রেম করে ভালবাসায় অন্ধ হয়ে মিনার দেশে ফিরে গিয়েছে ২০০৮ সালে। বিয়ে করেছে তাকেই। তারপর দেশে সেটেল করার অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার কথাই ঠিক ছিল। দেশে ফিরে যাওয়ার পর মিনার হয়ত টের পেয়েছে, তার একসময়ের সাংবাদিক জগতের প্রভাব এখন আর নাই। তার জায়গা অন্যেরা দখল করে নিয়েছে। পুরনো বন্ধুরাও খুব সহযোগিতা করে নাই। স্ত্রীর সহযোগিতা কতটুকু পেয়েছে আমার ধারণা নাই। সেই মেয়ে কি তাকে সত্যিই ভালবেসেছিল তার কিছু নাই জেনেও, নাকি মিনার আর আমেরিকায় ফিরবে না জেনে তার প্রিয় “লাজুক” এর স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল, কে জানে!
মিনারের হয়ত আর্থিক ক্ষমতা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সে তার নীতিতে অটল ছিল। কারো কাছে হাত পাতবার মত মানুষ মিনার ছিল না। দেশের কাছে, বন্ধুদের কাছে, প্রিয়তমার কাছে অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়ে ফিরে যাওয়া মিনার হয়ত কোনো কিছুতে এতই মনে কষ্ট পেয়েছিল যে সে ইচ্ছা করলেই নিউইয়র্কে ফিরে আসতে পারত। কিন্তু ফিরে না এসে সবার মাথা ব্যথা কমিয়ে দেবার জন্য নিজে নীরবে না ফেরার দেশে চলে গেল।
দিল খোলা, প্রাণ শক্তিতে ভরপুর অনেক সুন্দর মনের একটা মানুষ অকালেই হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে। দেশে এখন অনেক প্রতিভা তাই হয়ত মিনারের প্রতিভার মূল্যায়ন করার সময় নাই কারো। কিন্তু আমি হারিয়েছি আমার অনেক প্রিয় একজন বন্ধুকে। যার সাথে তার শেষ দিনগুলিতে আমার আর কথা হয় নাই আমার এক্ঘুয়েমির কারণে। তাই বলছি – মিনার, প্লিজ ফরগিভ মি, ম্যান। এন্ড আই রিয়েলী মিস ইউ।
কুইন্স, নিউইয়র্ক থেকে