:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
রাজধানীর আগারগাঁও মোল্লাপাড়া এলাকায় আর্থিক দুর্দশায় বিপর্যস্ত হয়ে কলেজপড়ুয়া ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মশিউর রহমান নামের এক বাবা ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এ সময় মেয়ে সিনথিয়াকেও হত্যার চেষ্টা করেন তিনি। এ ঘটনার জন্য ‘কেউ দায়ী নয়’ জানিয়ে তিনি একটি সুসাইড নোট লিখে গেছেন।
রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ছেলের নাম মোদাব্বির হোসেন সাদাব (১৮)। তিনি ঢাকা উদ্যান কলেজের ছাত্র ছিলেন। আহত সিনথিয়া শ্যামলীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
ডিএমপির তেজগাঁও জোনের এডিসি রুবায়েত হাসান জানান, মশিউর রহমানের স্ত্রী টিউশনি থেকে ফিরে মরদেহ দেহ দেখতে পান। ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মশিউর ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস নেন বলে প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে। এ ঘটনায় ‘কেউ দায়ী নয়’ জানিয়ে লেখে সুসাইড নোট জব্দ করা হয়েছে।
শেরবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সজিব দে বলেন, ‘ইফতারের সময় জাতীয় জরুরি সেবা–৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে বাবা–ছেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের লাশ শহীদ সোহরাওয়াদ্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে।’
স্বজনরা জানিয়েছেন, মশিউর আবাসন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পাঁচ–ছয় বছর আগে সেখান থেকে চাকরি ছাড়েন। পরে শুরু করেন শেয়ার ব্যবসা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বিষণ্নতায় ভূগছিলেন। বেশ কিছুদিন থেকে আর্থিক অনাটনেও ছিলেন।
মশিউরের স্ত্রী মজিদা খাতুন ডলি বলেন, আমার স্বামী আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে শেয়ারবাজারের সেকেন্ডারি লেভেলে ব্যবসা করতেন। তবে সেখান থেকে খুব একটা আয় হতো না। গত এক সপ্তাহ থেকে ওই ব্যবসার অবস্থা আরও খারাপ হয়। এছাড়া মশিউর পাঁচ–ছয় বছর আগে দক্ষিণখান এলাকার রতন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে সাড়ে ৩ কাঠা জমি কিনেন। পরে জানা যায়, জমির দলিল ভুয়া। জালিয়াতি করে রতন ওই জমি মশিউরের কাছে বিক্রি করেছে। এরপর জমির টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। জমির বর্তমান মূল ৩২ লাখ টাকা। রতন ১০ রাখ টাকা ফেরত দিতে রাজি হয়। কিন্তু তিন–চার বছর ধরে সেই টাকা দিচ্ছি, দেব বলে ঘুরিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, মাসখানেক ধরে রতন আর ফোন ধরছে না। এদিকে টাকার ফেরত না পাওয়া ও ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় আর্থিক অনটনে ছিলাম আমরা। দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে সংসারের ব্যয় বহন করা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এ কারণে আমার স্বামী হতাশায় ছিলেন। অভাব-অনটনের কারণ সংসারে তাদের রেখে কী করবে? এ জন্য হয়তো তাদের নিয়ে নিজে আত্মহত্যা করেছেন।
মজিদা খাতুন ডলি বলেন, সংসারের খরচ জোগান দিতে চারটি টিউশনি করি। তিনটি শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে পড়াতে হয়। আর একটা বাসায় এসে পড়ে যায়। এ থেকে মাসে আয় হয় ৮ হাজার টাকা। রোববার দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বাসা থেকে টিউশনি করার জন্য বের হই। এ সময় দুই সন্তান ও স্বামী বাসায় ছিলেন। টিউশনি শেষ করে পৌনে ৪টার দিকে বাসায় এসে দেখি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। পরে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বাসার নিরাপত্তাকর্মীর সহায়তায় ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে দরজা ভেঙে দেখি ঘরের এক রুমে মেয়েটা অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। আরেক রুমে খাটের ওপরে ছেলে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। ওই রুমের সিলিং ফেনের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে মশিউর। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক বাবা ও ছেলেকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। আর মেয়ের অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে শ্যামলী ডক্টরস কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগানস্টিক সেন্টারের নিবির পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকার একটি ভাড়া বাসার দ্বিতীয় তলায় থাকতেন তারা। তাদের বাড়ি বগুড়া গাবতলী এলাকায়। বর্তমানে লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।