:: তারেক চৌধুরী ::
পাঠকরা আমার লেখা পড়ে মন্তব্য করেন এবং ইতিবাচক কথা বলেন। ভালো লাগে। আপনাদেরকে ধন্যবাদ। আমি ইসলামিক পন্ডিত নই। তবে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ আছে। হঠাৎ করে মনে হলো ইসলাম ধর্মে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে নিশ্চয়ই কিছু তথ্য আছে। আমাদেরকে তা খুঁজতে হবে। আমি সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি ‘ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা’। যেমন চিন্তা তেমন ফল। হাদিসে মহামারী সংক্রান্ত অনেক তথ্য পেলাম। তাই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি। ইসলামে বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচার জন্য দুআ ছাড়াও অনেক পন্থা বর্ণনা করা হয়েছে। আমি এখন বর্তমানে করোনা বিস্তার রোধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাগুলো ইসলামিক আইনে কতটা সমর্থিত সেটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।
লক ডাউন আক্রান্ত স্থান ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
প্রায় ১৪’শ বছর পূর্বে মহানবী ( স:) বলেছেন ‘যদি জমিনের কোথাও প্লেগ দেখা দিয়েছে শুনো তাহলে সেখানে প্রবেশ করোনা। আর প্লেগ যদি তুমি যে এলাকায় থাকো সেই এলাকায় দেখা দেয় তাহলে সেখান থেকে বের হয়ো না। (সহীহ বুখারী)। বর্তমানে করোনা একটি মহামারী রোগ হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে। সুতরাং মহামারী প্লাগের কারণে মহানবী ( স:) যেসব ব্যবস্থা নিতে বলেছেন সব গুলো ব্যবস্থা নেয়া আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। আমাদের বহুল আলোচিত প্রবাসীরা সে জন্য করোনার ভয়ে দেশে যাওয়া উচিত নয়। এটা হাদিস সম্মত কথা। আর এজন্য আমরা লক ডাউনে থাকবো। কেউ আক্রান্ত হলে বের হবো না। কোন এলাকা লক ডাউন করলে আমাদের তা মেনে চলা উচিত। নিজে বের না হওয়া এবং প্রশাসন কে সহায়তা করা উচিত। এসব না করলে তো মনে হয় আমরা মহানবীর ( স: ) আদেশকে অমান্য করলাম। এইসবের জন্য এই একটা হাদিসই যথেষ্ট।
হোম কোয়ারেন্টাইন
করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে আমরা বিশ্ব ব্যাপী ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ শব্দ টি শুনতে শুনতে কান জ্বালা পালা। অথচ ইসলাম ধর্মে আমাদের প্রিয় নবী ১৪শ বছর পূর্বে ছোঁয়াচে রোগ থেকে বাঁচতে হোম কোয়ারেন্টাইনের কথা বলে গিয়েছেন। মহানবী ( স:) বলেছেন, ‘যারা ছোয়াচে রোগে আক্রান্ত তাদেরকে সুস্থ লোকদের কাছ থেকে দূরে রাখো।’ সহীহ মুসলিম নম্বর ( ২২২১) মহানবী ( স: ) রোগের ঔষধ খোঁজার কথা বলেছে এক হাদিসে। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ বুড়ো হওয়া ছাড়া এমন কোন রোগ দেন না যার কোন ঔষধ নেই। সুতরাং তোমরা তার ঔষধের ব্যবহার করো।’ মহানবী ( স:) ধর্মের সঙ্গে যুক্তির বিষয়ে জোর দিতেন। তিরমিযী শরীফের এক হাদিসে এসেছে যে মুহাম্মদ ( স:) একবার দেখলেন যে, এক বেদুইন তার উটটি বেঁধে না রেখেই চলে যাচ্ছে, তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি উট কে বেঁধে রেখে যাচ্ছো না কেন ? সে বললো আমার আল্লাহর উপর বিশ্বাস আছে। তখন প্রিয় নবী বললেন,’আগে উটটি বেঁধে রাখো এবং একই সাথে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখো।’ ঠিক একইভাবে আমাদেকে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য শুধু দুআ করলেই চলবে না একই সাথে আমাদের এই রোগ থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে হবে।
মসজিদ বন্ধ রাখা বা জামাত বন্ধ রাখা
আমরা কাবা শরীফসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জামাতে নামাজ বন্ধ আছে। এই নিয়ে অনেক হই চই হচ্ছে। এই বিষয়ে ও হাদিসে কিছু ইতিবাচক প্রমান রয়েছে। ইবনে উমার ( রা : ) বর্ণনা অনুযায়ী ঠান্ডা এবং বৃষ্টি স্নাত রাত্রে তিনি বাড়িতে নামাজ পড়তে পরামর্শ দেন ( হাদিস নম্বর বুখারী ৬৩৫) . সামান্য বৃষ্টি ও ঠান্ডার জন্য যদি বাড়িতে নামাজ পড়ার পরামর্শ দেন , তাহলে প্রাণ চলে যায় এমন ভয়ানক করোনা ভাইরাসের জন্য নিশ্চয় মসজিদে না পড়ে বাড়িতে পড়া অনুমোদিত হবে।
মজুদ না করা
করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমরা ব্রিটেনে ও অন্য দেশে যে ব্যাপক হারে খাদ্য সামগ্রী মজুদ করেছি তা মোটেই ইসলাম সম্মত নয়। সহীহ মুসলিমের একটি হাদিসে আছে যে খাদ্য সামগ্রী মজুদ করে রাখে সে পাপী। ( মুসলিম নম্বর ১৬০৫) .আল্লাহ আমাদের খায় মজুদের এই পাপ থেকে বিরত রাখুন এই দুআই করি।
হাত ধুয়া এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা
করোনা রোগ থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে বাহিরে থেকে ঘরে আসলে সাবান বা জীবাণুনাশক লিকিউড দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে বলা হয়েছে। আমরা এটা করে আসছি করোনা ভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার দিন থেকে। অনেক সময় কয়েক বার হাত ধৌত করি. এটাও কিন্তু হাদিস সম্মত। আবু মালিক থেকে বর্ণিত হয়েছে, যে মুহাম্মদ ( স: ) বলেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। আরেকটি হাদিসে আছে, কোন সময় যখন তোমরা কাশি দিবে বা স্নিজ করবে তখন মুখ ডেকে রাখবে। আমাদেরকেও কাশি দেয়ার সময় হাত দিয়ে বা হাতের স্লিপ দিয়ে মুখ ঢাকতে বলা হয়েছে , যাতে করোনা ভাইরাস বিস্তৃত না হতে পারে। এ গুলো কিন্তু আমাদের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের পরামর্শ। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ কর্তৃক বর্ণিত আছে যে, রসূল ( স:) বলেন, বছরে রাতের বেলা যখন মহামারী শুরু হয় তখন গাড়ি ও পানি ঢেকে রাখো কারণ জীবাণু তাতে প্রবেশ করতে পারে। ( মুসলিম ২০১৪) আয়েশা ( রা: ) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসূলুল্লাহ ( স:) খাবার বা পানি পান করার পূর্বে হাত ধৌত করতেন।এই হাদিস গুলো পড়লে মনে হয়, ইসলাম যে কত বিজ্ঞান সম্মত কেউ এটা নিয়ে না পড়লে বুঝতে পারবে না।
মনোবল না ভাঙা
সহীহ বুখারীর ( ৫৪০২) আরেকটা হাদিসে আছে, আল্লাহর কোন বান্দা কোন জমিনে থাকে প্লেগে আক্রান্ত হয় , রোগী হিসাবে থাকে এবং আল্লাহর কাছে পুরস্কার আশা করে। জানে যে, আল্লাহ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার বাহিরে কিছু হবে বা , তাকে শহীদের পুরস্কার দেয়া হবে. কোন কারণে কেউ আক্রান্ত হলে ডাক্তারি সব ব্যবস্থা করার পাশাপাশি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা রাখতে হবে। আর এটাই ইসলামের শিক্ষা।
আল্লাহর সাহায্য চাওয়া
আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত আছে যে, রোগ শোকের সময় রাসূলুল্লাহ ( স:) পড়তেন ‘ও আল্লাহ আমি তোমার কাছ থেকে কুষ্ঠ রোগ, মস্তিস্ক বিকৃতি, ছোয়াচে এবং সকল বাজে রোগ থেকে আমাকে রক্ষা করো।’ এই দোয়ার আরবি উচ্চারণ দাঁড়ায় ‘আল্লা হুম্মা ইন্নি আয়ুজুবিকা মিনাল ভারসি, জুনুনি, ওয়াল জুযামী, ওয়াল সায়্যিল আসকাম।’ করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য বর্তমানে এই দুআই সবাই পড়ছেন। পরম করুনাময় আমাদের দুআ কবুল করুন এই প্রার্থনা করি। আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত আছে যে প্লেগ বা মহামারীতে মারা যায় সে একজন শহীদ। রসূল ( স:) বলেছেন, ‘যারা প্লেগ পীড়িত এলাকা থেকে পালাবে তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ালো। আর যারা থাকলো তাদের জন্য শহীদ হওয়ার পুরস্কার দেয়া হবে।’
সর্বশেষে আমরা আল্লাহর কাছে দুআ করবো ‘ ও আল্লাহ! মানব জাতির প্রভু, আমাদের কষ্ট দূর করে দাও এবং সুস্থতা দান করে দাও। তুমিই রোগ মুক্তকার, তুমি ছাড়া কেউ সুস্থ করতে পারবে না। আমাদেরকে এমন ভাবে সুস্থ করো যাতে রোগের লেশমাত্র না থাকে।’
আল্লাহ আমাদের ভয়ানক করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখুন এবং সকলকে সুস্থ রাখুন। এই প্রবন্ধে কোন ত্রুটি থাকলে জানাবেন। সংশোধন করে নেবো। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন। আমিন।
সেভেন কিংস, রেডব্রিজ, যুক্তরাজ্য থেকে