:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
রাজধানীর মিরপুরের ভাষানটেকের কালভার্ট রোড এলাকায় মশার কয়েল ধরাতে গিয়ে সিলিন্ডারের গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ কিশোরী লিজা (১৮) মারা গেছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মারা যায় লিজা। এ নিয়ে এই ঘটনায় একই পরিবারের ৬ জনেরই মৃত্যু হলো। লিজা কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার চান্দগাও গ্রামের মো. লিটনের মেয়ে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের হাই ডিফেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে (এইচডিইউ) মারা যায় লিজা।
এই ঘটনায় গত ১৩ এপ্রিল শনিবার লিজার দাদি মেরুন্নেসা, ১৫ এপ্রিল রাতে মা সূর্য্য বানু, ১৬ এপ্রিল সকালের দিকে বাবা লিটন, ১৯ এপ্রিল সকালের দিকে তাঁর ছোট বোন লামিয়া ও ২৪ এপ্রিল বুধবার দুপুরের বোন সুজন এবং আজ সন্ধ্যার দিকে ওই পরিবারের একমাত্র চিকিৎসাধীন কিশোরী লিজা একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তরিকুল ইসলাম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভাষানটেকের ঘটনায় দগ্ধ লিজা শনিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। এর আগে তার মা সূর্য বানু (৩০), বাবা লিটন (৪৮), নানী মেহেরুন্নেছা (৮০), বোন লামিয়া (৭) ও ভাই সুজন (৮) চিকিৎসাধীন মারা গেছে।
তাদের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার চাঁদগাঁও গ্রামে। থাকতেন মিরপুরের ভাসানটেক এলাকায়। আসবাবপত্র ব্যবসায়ী লিটন চৌধুরীর ছেলে-মেয়েরা সবাই পড়ালেখা করত।
পুলিশের ধারণা, জমে থাকা গ্যাসই আগুন লাগার কারণ।
ঘটনার পর ভাসানটেক থানার এসআই নাঈমুল ইসলাম হৃদয় জানিয়েছিলেন, বাড়িটিতে রান্নার জন্য ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারটি ঘরের বাইরে ছিল। পাইপ দিয়ে সেই গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয় চুলায়। ভোরে মশার কয়েল জ্বালাতে গেলে পুরো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে সবাই দগ্ধ হয়।
লিজার প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া ময়না বেগম জানান, পরিবার নিয়ে কালভার্ট রোডের দুই তলা বাড়িটির নিচ তলায় ভাড়া থাকতেন লিটন। সেখানেই ফার্নিচার ব্যবসা ছিল তার। রাতে বাসায় সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরে লিটন মশার কয়েল জ্বালানোর জন্য দিয়াশলাই জ্বালাতেই আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে পরিবারটির ছয়জনই দগ্ধ হন।
তিনি জানান, বাসাটিতে গ্যাস দিয়ে রান্না করতেন তারা। সবাই ধারণা করছেন, গ্যাসের লিকেজের কারণে বাসায় গ্যাস জমে ছিল। মশার কয়েল জ্বালানোর জন্য দিয়াশলাই জ্বালাতেই সেই গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় একই পরিবারের একে একে ছয়জন মারা গেল।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ভোর ৪টার দিকে ভাষানটেক নতুন বাজার কালভার্ট রোডের ৪/১৩ নম্বর বাসায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাতে দগ্ধ হন মো. লিটন, তার স্ত্রী সূর্য বানু, তাদের তিন সন্তান লিজা, লামিয়া, সুজন ও লিটনের শাশুড়ি মেহরুন্নেছা।