:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
চলমান তাপপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২ মে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষাসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিবসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে শিক্ষকসহ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনা হলে শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াত-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, তবে এই সময়ে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পাবলিক পরীক্ষা, এ লেভেল, ও লেভেল পরীক্ষা নিতে পারে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) ব্যবস্থা রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান চাইলে এই সময়ে খোলা রাখতে পারে।
‘তীব্র তাপদাহে বাড়ছে হিটস্ট্রোক: শিক্ষকসহ ১২ জনের মৃত্যু’, ‘হিটস্ট্রোকে এক দিনে ১৮ জনের মৃত্যুর রেকর্ড’ ও ‘দাবদাহের বিপদে রাজধানী’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে এনে শুনানি করেন আইনজীবী মো. মনির উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।
চলমান তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে আদালতে প্রার্থনা করেছেন বলে জানান আইনজীবী মো. মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দিয়েছেন। আদালত আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসার ক্লাস বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ঈদুল ফিতরের ছুটির পর গত ২১ এপ্রিল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও এর মধ্যেই সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হলে ছুটি এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। তবে গরম না কমলেও সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগের মধ্যেই গত রোববার খুলে যায় সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এদিন বিভিন্ন স্থানে ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে। এরপর রাতে মন্ত্রণালয় ৫ জেলায় মাধ্যমিক ও কলেজ সোমবার ছুটি ঘোষণা করে।
তাপপ্রবাহের সময় সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ রাখা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। শিক্ষাসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিবসহ বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল পাঁচ জেলায় বন্ধ ছিল ক্লাস। আর বিকালে মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় আজ ঢাকাসহ ২৭ জেলায় ক্লাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, দেশে চলমান দাবদাহের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সকল জেলা, ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর জেলা এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সকল মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে।
‘বিদ্যালয় বন্ধে আগ্রহ দেখা যায়, খোলা রাখার বিষয়ে নয়‘
বিদ্যালয় বন্ধ রাখার বিষয়ে যে রকম আগ্রহ দেখা যায়, খোলা রাখার বিষয়ে সে রকম আগ্রহ দেখা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ‘ভাষা আন্দোলন এবং বিশ্বে বাংলাভাষী স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের আবির্ভাব’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।
ঢাবির সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের (কারাস) উদ্যোগে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘স্কুল বন্ধ রাখার বিষয়ে যে রকম আগ্রহ দেখা যায়, বিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সে রকম আগ্রহ দেখা যায় না। আমি আপনাদের অনুরোধ করব—বিদ্যালয় খোলার বিষয়টিও আপনারা মাথায় রাখবেন। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, তাপমাত্রা ৪০ এর ঊর্ধ্বে যায়নি—সেখানে খোলা রাখলে সমস্যা আছে বলে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা বন্ধ ঘোষণা করেছি, সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে। তীব্র তাপমাত্রার পরেও যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখে, সেটা আমরা দেখব। তবে এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। সারা দেশের সব বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। যেসব এলাকায় বন্ধ করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি রয়েছে, সেখানে বন্ধ না হলে বিষয়টি আমরা দেখব।’